চারতলা বাড়ির সামনে দাঁড় করানো একটি গাড়ি। স্থানীয় লোকজন আচমকাই দেখলেন তাতে চাদর ঢাকা দিয়ে একটি নিথর দেহ তোলা হচ্ছে। সন্দেহ হতেই প্রতিবেশীরা এগিয়ে গিয়ে একরকম জোর করেই চাদর সরিয়ে দেখলেন দেহটি ওই বাড়ির গৃহবধূর। গলায় কালো দাগ, ঠোঁটের কোনায় রক্ত! কিন্তু কী করে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটল শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তার সদুত্তর দিতে না পারায় শেষমেশ প্রতিবেশীরাই খবর দেন পুলিশে। মৃতদেহ আটকে রেখে চলে বাড়িতে ভাঙচুর। পরে অবশ্য বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বাঁকড়ায়। পুলিশ সূত্রে খবর, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য ওই গৃহবধূর উপর অত্যাচার চলছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর সেই জন্যই এ দিন তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষ। রোশনী বেগম (১৮) নামে ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেরাও ডোমজুড় থানায় পণের জন্য অত্যাচার ও খুনের মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে রোশনের এক ননদ মুন্নি বেগমকে গ্রেফতার করেছে। তবে পরিবারের বাকি সদস্যরা অবশ্য পলাতক বলেই দাবি পুলিশের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’বছর আগে বাঁকড়ার দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা শেখ জাকিরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ওই পাড়ারই বাসিন্দা রোশনীর। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই রোশনীর উপর চাপ দেওয়া হত বাপের বাড়ি থেকে টাকা ও দামী জিনিষপত্র নিয়ে আসার জন্য। ওই গৃহবধূর খুড়তুতো ভাই আফরোজ খান বলেন, ‘‘প্রথমে ওঁদের দাবি মেনে আমাদের সাধ্যমতো জিনিষ ও টাকা দিতাম। কিন্তু ক্রমশ ওঁদের দাবি বেড়েই চলছিল। জাকিরের বোনেরাও বিয়ের পর বাপের বাড়িতে থেকে অত্যাচার করত।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, দাবি মেনে টাকা ও জিনিষপত্র দিতে না পারায় শুরু হয় রোশনীর উপর অকথ্য অত্যাচার। টানা দু’বছর ধরে সেই অত্যাচারের প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ ওই গৃহবধূর দিদি রুকসার বেগমের।
স্থানীয়েরা পুলিশকে জানায়, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ তাঁরা দেখেন বাড়ির সামনে একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাতে চাদর ঢাকা দিয়ে কারও একটা দেহ তুলছে জাকিররা। স্থানীয় বাসিন্দা খুসবু বেগম বলেন, ‘‘চাদর ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে কারও দেহ তোলা হচ্ছে দেখে সন্দেহ হয়। তখন আমরা কয়েক জন মিলে গিয়ে জোর করে জাকিরদের আটকাই। দেখতে পাই রোশনী মারা গিয়েছে। এরপরেই পুলিশকে খবর দিই।’’ স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা করার সময় স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার ছেলে তথা তৃণমূলের যুব নেতা শেখ আব্দুল সালেম সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তাঁর মদতে রোশনীর মৃতদেহ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হতেই ক্ষেপে যান বাসিন্দারা। শুরু হয় জাকিরদের বাড়িতে ভাঙচুর। তবে ওই নেতার মদতেই জাকির সহ তাঁর পরিবারের অন্যান্যরা পালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও শেখ আব্দুল সালেম বলেন, ‘‘জাকিরদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি গণ্ডগোল মেটাতে গিয়েছিলাম মাত্র। কোনও অপরাধীকে আড়াল করা আমার কাজ নয়।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy