Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙন রোধে দাওয়াই ভাটিভার ঘাস

মেদিনীপুর, আরামবাগ-সহ বেশ কিছু জেলায় সাফল্য এসেছে আগেই। সেই পথে হেঁটে নদী ভাঙন রুখতে এ বার একশো দিনের প্রকল্পে ভাটিভার ঘাস লাগানোর প্রস্তুতি নিল নদিয়া জেলা প্রশাসনও।

টবে সাজানো ভাটিভার ঘাসের চারা।— নিজস্ব চিত্র

টবে সাজানো ভাটিভার ঘাসের চারা।— নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার ও সৌমিত্র সিকদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

মেদিনীপুর, আরামবাগ-সহ বেশ কিছু জেলায় সাফল্য এসেছে আগেই। সেই পথে হেঁটে নদী ভাঙন রুখতে এ বার একশো দিনের প্রকল্পে ভাটিভার ঘাস লাগানোর প্রস্তুতি নিল নদিয়া জেলা প্রশাসনও।

প্রতি বছরই নদীপাড় ভাঙে। তলিয়ে যায় বাড়িঘর। বাস্তুহারা হন হাজার হাজার মানুষ। বিঘের পর বিঘে চাষের জমি চলে যায় নদীর গর্ভে। ফি বছরের চিত্রটা এমনটাই। প্রকৃতির রোষের মুখে কিছু করার থাকে না অসহায় মানুষের। এ বার তার সঙ্গে যুঝতে সেরা দাওয়াই হতে পারে ভাটিভার ঘাস।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ফি বর্ষায় বানভাসি হয়। তার অন্যতম প্রধান কারণ নদী ভাঙন। ভাঙন মোকাবিলায় বছর দু’য়েক আগে ঘাটালে শীলাবতী নদীর ধারে ৫০০ মিটার এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে ভাটিভার ঘাস লাগানো হয়। তাতে সাফল্য মেলে। শুধু ঘাটাল নয় মেদিনীপুরের কাঁসাই, হুগলির আরামবাগ মহকুমার দামোদর-সহ একাধিক নদীর পাড়ে ওই ঘাস লাগিয়ে সাফল্যের কথা মেনেছেন সব মহলই। ভাঙন রোধে নদিয়ার জেলা প্রশাসনও সেই ঘাসকে কাজে লাগাতে চাইছে।

এমনিতেই নদিয়া ভাঙনপ্রবণ জেলা বলেই পরিচিত। প্রতি বছর বর্ষায় জেলায় ব্যাপক হারে নদীপাড় ভাঙে। ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। তাই জেলা প্রশাসন চাইছে সমস্যার স্থায়ী সমাধান। এই পরিস্থিতিতে ভাটিভার ঘাস কাজে আসতে পারে বলে ধারণা তাদের। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আগামী বর্ষায় প্রকল্পের সুফল মিলবে আশা করা যায়। জেলায় প্রতিটি ব্লকে নার্সারি তৈরি হয়েছে। প্রায় এক লক্ষ ঘাস কেনা হয়েছে।’’

নদিয়ায় প্রধান নদীগুলি হল ভাগীরথী, জলঙ্গি, চূর্ণি ও মাথাভাঙা। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ রয়েছে নদিয়ায়। প্রতি বর্ষায় নদীপাড় ভাঙনের ফলে তীরবর্তী গ্রামগুলি ডুবে যায়। বিশেষ করে কালীগঞ্জ থেকে কল্যাণী পর্যন্ত ভাগীরথী নদীপাড়ে ব্যাপক ভাঙন হয়। যদি পরিকল্পনা মতো নদীর দু’ধারে ভাটিভার ঘাস লাগিয়ে প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করা যায় তা হলে নদী ভাঙনের সম্ভবনা অনেক কমবে। দাবি জেলা প্রশাসনের এক কর্তার।

নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে এই জেলায় প্রায় ৭৪৪ কিলোমিটার জুড়ে নদীবাঁধ এলাকায় ভাটিভার ঘাসের চাষ ও রোপণ করা হবে। এর ফলে নদিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেমন সম্ভব হবে তেমনই একশো দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি হবে।

গোটা জেলা জুড়ে এত বড় আকারে এই প্রকল্প নদিয়া জেলাতেই প্রথম বলে জানিয়েছেন রাজ্যের একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও রাজ্যে কোথাও কোথাও ভাটিভার ঘাস লাগিয়ে ভাঙন রোধ করা গেলেও এত বড় উদ্যোগ এই প্রথম। এই প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয় তা হলে নদিয়া জেলা অন্যদের পথ দেখাবে।’’

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অসীত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভূমিক্ষয় রোধে এই ঘাসের ব্যবহার সারা পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছে। যে কোনও ‘মেকানিক্যাল মেজরের’ তুলনায় এই ঘাস অনের বেশি কার্যকর। এর শিকড় শুধু অনেক বেশি বিস্তৃত নয় অনেক বেশি শক্তও। লোহার জালের মতোই এই শিকড় মাটিকে ধরে রাখে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে নদী ভাঙন রোধে স্যফল্য আসবে।’’

চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শোভারানি বৈদ্য বলেন, ‘‘প্রতি নিয়ত ভাঙন চলছে। এ বছর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন ভাবে ভাঙন রোধের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পুরোপুরি তা রোধ করা সম্ভব হয়নি।’’ তিনি বলেন, ‘‘অনেক কিছুই তো করে দেখা গেল। এ বার এই ঘাস লাগিয়ে একটা পরীক্ষা করা যাক।’’ তিনি জানান, ওই ঘাস চাষের জন্য বিঘা দুয়েক অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি বাছা হয়েছে। সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ওই ঘাস বুনবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news vativa grass soil erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE