Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উপাচার্যের দেখা নেই, ক্লাস বন্ধ বিসিকেভি-তে

সব মিলিয়ে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে।  ছাত্রছাত্রীদের শনিবারের মধ্যে হস্টেল  খালি করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন উপাচার্য।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

মনিরুল শেখ
হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৩
Share: Save:

উপাচার্য ধরণীধর পাত্র নিজের প্যাডে লিখে দিয়েছিলেন, ছাত্রছাত্রীদের দাবি মতো শুক্রবার বিকেল ৪টের মধ্যে দুই ডিনকে তিনি সরিয়ে দেবেন। বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। দুই ডিনকে সরানো হয়নি। দেখা মেলেনি উপাচার্যেরও। ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের শনিবারের মধ্যে হস্টেল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন উপাচার্য।

‘চলো পাল্টাই বিসিকেভি’ স্লোগান তুলে কয়েক দিন ধরে কিছু ছাত্রছাত্রী যে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছিলেন, স্থানীয় তৃণমূল তথা টিএমসিপি নেতৃত্ব গোড়া থেকে তার বিরোধিতা করে এসেছেন। শুক্রবার অবশ্য টিএমসিপি-র পতাকা হাতে ক্যাম্পাসে মিছিল বার করা হয়। আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি দুষ্কৃতী হামলারও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে মিছিল থেকে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী তাঁদের পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন বুঝে কি এই ভোলবদল? টিএমসিপি-র নদিয়া জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত শুধু বলেন, ‘‘শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিসিকেভি-তে আসছেন। উনিই যা বলার বলবেন।’’

দেশের অন্যতম সেরা এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গত কয়েক দিন ধরেই ছাত্রদের আন্দোলনে উত্তপ্ত। বুধবার রাতে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলা চালানোর পরে তা অন্য মাত্রা নেয়। বহু সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও গবেষকেরা এসে অবস্থানে যোগ দেন। উপাচার্য সেই রাতে আসেননি। পরের দিন দফতরে এসে তিনি ক্ষোভের মুখে পড়েন। এত দিন ধর্না চলছিল মূলত ডিন অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার গৌতম চক্রবর্তী ও কৃষি অনুষদের ডিন শ্রীকান্ত দাসকে পদ থেকে সরানোর দাবিতে। বৃহস্পতিবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও ওঠে। চাপের মুখে গভীর রাতে উপাচার্য নিজের প্যাডে লিখিত ভাবে দুই ডিনকে সরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

কিন্তু এ দিন উপাচার্যের দেখা পাওয়া যায়নি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, বুধবারের হামলার ঘটনায় টিএমসিপির রাকেশ পাড়ুইয়ের নাম উল্লেখ করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে হবে। শিক্ষকেরা উপাচার্যের কাছে দাবি করেন, ছয় সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি করতে হবে। সেই তদন্ত চলাকালীন উপাচার্যকে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে বলেও ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশ দাবি করেন। এর কোনওটাই হয়নি।

বিকেল ৪টের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উপাচার্যের দেখা না পেয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রেরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে বৈঠকে বসেন। এক দলের মত ছিল, উপাচার্যের বাংলো ঘেরাও হোক। কিন্তু অন্যেরা তাঁদের নিরস্ত করেন। বারবার তাঁকে ফোন করা হলে এক জন ধরে বলতে থাকেন, ‘স্যর বাংলোতেই আছেন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রাম নিচ্ছেন।’ সন্ধ্যায় তাঁর বাংলোয় গেলে নিরাপত্তা রক্ষীরা আবার দাবি করেন, ‘স্যর সকাল সাড়ে ১১ নাগাদ চলে গিয়েছেন। তিনি নার্সিংহোমে ভর্তি।’

তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েবকুপা-র বিসিকেভি ইউনিটের আহ্বায়ক সুনীল ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘উপাচার্য চোর-পুলিশ খেলছেন! এই পরিবেশে তো পড়ানো যায় না। সন্তানসম পড়ুয়াদের বাইরের লোকজন এসে মারবে, এটা সহ্য করতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE