Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উন্নয়নের জয়, হাসছেন অনুব্রত

বিরোধীদের দায়ের করা সুপ্রিম কোর্টের মামলা। পঞ্চায়েতের যে ২০ হাজারের বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি, তার ভাগ্য নিয়েই হয়েছিল সেই মামলা।

 উল্লাস: ঢাকের বোলে জয়ের মিছিল। শুক্রবার কীর্ণাহার ২ পঞ্চায়েতে। ছবি: কল্যাণ আচার্য

উল্লাস: ঢাকের বোলে জয়ের মিছিল। শুক্রবার কীর্ণাহার ২ পঞ্চায়েতে। ছবি: কল্যাণ আচার্য

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ভোটের আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে গেলে উন্নয়ন তাদের পথ আটকাবে।’’

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যা বলেছিলেন, তা-ই করে দেখিয়েছিলেন। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে সত্যিই রেকর্ড গড়েছিল বীরভূম। ভোটের ঢের আগে মনোনয়ন পর্বেই গোটা জেলা পরিষদ পকেটে পুরে নিয়েছিল অনুব্রতর দল। তা-ও একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং সম্পূর্ণ বিরোধী-শূন্য অবস্থায়! তার পরেও এত দিন স্বস্তিতে ছিলেন না জেলা পরিষদের ৪২ আসনেই ‘জয়ী’ তৃণমূলের প্রার্থীরা। সৌজন্যে, বিরোধীদের দায়ের করা সুপ্রিম কোর্টের মামলা। পঞ্চায়েতের যে ২০ হাজারের বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি, তার ভাগ্য নিয়েই হয়েছিল সেই মামলা।

কিন্তু, শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে স্বস্তি ফিরেছে শাসক-শিবিরে। নতুন করে কোনও আসনে ভোট নয় এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসনের ফল ঘোষণা করা যাবে— সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এ দিন এই রায়ই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে ই-মেলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বৈধতাও নাকচ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই রায় সত্যের রায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের রায়, রায়কে স্যালুট।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও বলেন, ‘‘সত্যের জয় হয়েছে। উন্নয়নের বহর দেখেই এ বার ভোটে বিরোধীদের কেউ দাঁড়াতে সাহস করেননি। মামলা করে বাংলা ও বীরভূমের উন্নয়ন স্তব্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন বিরোধীরা। আদালতের রায় ওঁদের সেই ইচ্ছেয় জল ঢেলে দিয়েছে।’’

এ বার ভোটে জেলা পরিষদের মতোই ছবি ছিল বাকি দুই স্তর, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতও। জেলায় ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৪৬৫টি আসনের মধ্যে নির্বাচন হয়েছিল মাত্র ৬০টি আসনে। আর ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২২৪৭টি আসনের মাত্র ২৭৯টিতে ভোট হয়। ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল পায় মোট ৪৫৭টি (৪০৫ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী) আসন। বিজেপির ঝুলিতে যায় বাকি ৮টি। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২২৪৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২১৭৩টি (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ১৯৬৮টিতে), বিজেপি ৬৩, সিপিএম ৫, ফব ১, কংগ্রেস ১ এবং নির্দল ৪। জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে বিরোধী প্রার্থী ছিলেন। বিজেপি-র সেই মহিলা প্রার্থীও মনোনয়নপর্বেই তৃণমূলে নাম লেখানোয় জেলা পরিষদের ভাগ্য ভোটের আগেই নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল।

অনুব্রত মণ্ডল

বিরোধীদের দাবি ছিল, মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ঘিরে শাসকদলের ‘উন্নয়ন’ দাঁড়িয়ে ছিল। ‘উন্নয়ন’-এর ভয়েই ভোটে দাঁড়ানোর চেয়ে প্রাণরক্ষা আগে বলে মনে করেছেন বিরোধীরা। ও দিকে, বিনা ভোটে জয়ী শাসকদলের প্রার্থীরা অনেক আগে বিজয় মিছিল করে ফেললেও সুপ্রিম কোর্টের মামলা তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলেছিল। তাঁদের মনে এত দিন ধুকপুকানি ছিল আদালত কী রায় দেবে, তাকে ঘিরে। ঝুলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির বোর্জ গঠন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল। এ দিন সব আশঙ্কার মেঘ কেটে যায়।

শাসক উল্লসিত হলেও বিরোধী শিবির মনমরা। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে সমালোচনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে আমরা অন্য রকম বিচার আশা করেছিলাম। সমস্ত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শাসকদলের বাধায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে আমরা অধিকাংশ আসনে লড়তে পারিনি এই তথ্যে তো কোনও ভুল নেই।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে হিংসা হয়েছে, তা মেনেছে আদালত। আমাদের তোলা দাবিকে মান্যতাও দিয়েছে আদালত। কেন রাজ্যে ৩৪ শতাংশ আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়নি, সুপ্রিম কোর্ট সে প্রশ্নও তুলেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকের কথায়, ‘‘বীরভূম তো সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কেননা জেলা পরিষদের ১০০ শতাংশ, পঞ্চায়েত সমিতির ও গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে যেখানে ৮৮ শতাংশ আসনে ভোট না হয়ে থাকে, সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে কতটা ভয়ঙ্কর সেটা বোঝাই যায়।’’ ই-মেলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বৈধতাও নাকচ করা নিয়ে মনসাবাবুর বক্তব্য, ‘‘হাইকোর্ট মেনেছিল। সুপ্রিম
কোর্ট মানেনি। তবে আগামী দিনে প্রযুক্তি ব্যবহারে গণতন্ত্র সুরক্ষিত করার পথ প্রসারিত করার ভাবনা উপস্থাপিত হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal TMC Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE