Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চলে গেলেন শতায়ু বিজয়কুমার

এ বছর মহকুমায় প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার কথা ছিল। তার আগেই চলে গেলেন শতায়ু স্বাধীনতা সেনানী বিজয়কুমার দত্ত। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মানবাজারের পোদ্দারপাড়ার বাড়িতে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়বাবুর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।

বিজয়কুমার দত্ত। ফাইল চিত্র

বিজয়কুমার দত্ত। ফাইল চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

এ বছর মহকুমায় প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার কথা ছিল। তার আগেই চলে গেলেন শতায়ু স্বাধীনতা সেনানী বিজয়কুমার দত্ত। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মানবাজারের পোদ্দারপাড়ার বাড়িতে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়বাবুর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।

জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকা দু’জন ছিলেন শতায়ু। মানবাজারের মাঝিহিড়া জাতীয় বুনিয়াদি আশ্রম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত। আর বিজয়বাবু। বছর দুয়েক আগে চিত্তবাবু প্রয়াত হন। চিত্তবাবুর ছেলে প্রসাদ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘১৯১৫ সালের ১৪ জুন বাবার জন্ম হয়। বাবার মুখেই শুনেছি, বিজয়বাবু তাঁর থেকে আট দিনের বড় ছিলেন। সেই সুবাদে বাবা ওঁকে দাদা বলে ডাকতেন।’’

খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকে বিজয়বাবুর বাড়িতে তাঁর অনুগামী এবং প্রশাসনের কর্তারা যান। এসডিও (মানবাজার) সঞ্জয় পাল ও বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার তাঁর পরিজনদের সমবেদনা জানিয়ে আসেন। এসডিও বলেন, ‘‘আগামী ২৬ জানুয়ারি মানবাজার মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বড় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। বিজয়বাবুর হাত দিয়ে ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার পরিকল্পনা ছিল। সেটা আর হল না।’’ মানবাজারের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু বিজয়বাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সাম্যপ্যারী টুডু মিছিলে হাঁটেন। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকেও এ দিন বিজয়বাবুকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

বিজয়বাবুর ছেলে উত্তম দত্ত বলেন, ‘‘বাবা ইদানীং চোখে কিছুটা কম দেখতেন আর কানে কম শুনতেন। এ ছাড়া আর কোনও সমস্যা ছিল না। খাওয়াদাওয়ায় অত্যন্ত সংযমী ছিলেন। নিয়মিত যোগাভ্যাস করতেন।’’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিজয়বাবু বলেছিলেন, শরীরটা ভাল লাগছে না। বিজয়বাবুর নাতি গৌরহরি বলেন, ‘‘দেখলাম দাদুর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।’’

শুক্রবার বিকেলে পোদ্দারপাড়ার বাড়ি থেকে গাড়িতে বিজয়বাবুর দেহ নিয়ে বেরিয়ে মানবাজার শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। রাতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ কবি গৌতম দত্ত বলেন, ‘‘অনেক অনুষ্ঠানে দেখেছি লোকজন আসেনি। বিজয়বাবু একাই হারমোনিয়াম নিয়ে গাইছেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।’ তিনি বলতেন, কারও জন্য কোনও কাজ থেমে থাকে না। প্রত্যেক বছর ৩০ সেপ্টেম্বর শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে থানা চত্বরে যেতেন।’’

জেলায় স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই কংগ্রেস ছেড়ে লোকসেবক সঙ্ঘে যোগ দিয়েছিলেন। বিজয়বাবুও ছিলেন লোকসেবক সঙ্ঘের কর্মী। লোকসেবক সঙ্ঘের পক্ষ থেকে কর্মীদের নিয়ে সচিব সুশীল মাহাতো এ দিন বিজয়বাবুর শেষযাত্রায় হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মীকে হারালাম। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। আমাদের দলের কর্মীদের জন্য তাঁর দরজা সবসময় খোলা ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE