Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কারা ভাঙল মূর্তি, নবান্নে রিপোর্ট নেই এক মাসেও

১৪ মে শাহের রোড শোয়ের পরে কলকাতা পুলিশ যে-বিবৃতি দিয়েছিল, তাতে বিজেপির মিছিল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া এবং তার প্রেক্ষিতে গোলমাল শুরুর কথা বলা হয়। পরে কলকাতা পুলিশ সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০৪:১০
Share: Save:

কেটে গিয়েছে গোটা একটি মাস। গত ১৪ মে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো চলাকালীন গোলমালে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙচুর করা হয় বিধান সরণির বিদ্যাসাগর কলেজে। কে বা কারা তা ভেঙেছিল, তার কোনও তদন্ত রিপোর্ট শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্য সরকারের ঘরে জমা পড়েনি। নবান্ন সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের তরফে এই নিয়ে কোনও প্রাথমিক রিপোর্টও পেশ করা হয়নি।

পুলিশি তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে নতুন কমিটি গড়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। স্বরাষ্ট্রসচিব ছাড়াও সেই কমিটিতে রয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, অন্য পুলিশকর্তা জাভেদ শামিম, বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ এবং স্থানীয় থানার ওসি। নবান্নে কমিটির প্রথম বৈঠক সবে হয়েছে। সেখানেও কারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল, সেই বিষয়ে কোনও দিশা মেলেনি বলেই সরকারি সূত্রের খবর।

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার মতে, ‘‘সরকার গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে যার কাছে যা যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বিদ্যাসাগর কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ তাঁদের হাতে থাকা নথি জমা দেবেন। কমিটি সবই খতিয়ে দেখবে।’’ সেই যাচাইকত দিনে শেষ হবে এবং রিপোর্টে কারা মূর্তি ভেঙেছিল, তার তথ্যপ্রমাণ পেশ করা যাবে কি না, সেই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কমিটির কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কর্তা।

১৪ মে শাহের রোড শোয়ের পরে কলকাতা পুলিশ যে-বিবৃতি দিয়েছিল, তাতে বিজেপির মিছিল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া এবং তার প্রেক্ষিতে গোলমাল শুরুর কথা বলা হয়। পরে কলকাতা পুলিশ সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। লালবাজার সূত্রের খবর, হাঙ্গামা ও মূর্তি ভাঙার তদন্তে নেমে প্রায় ১০০ জনকে আটক করা হয়। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের কাছে এই বিষয়ে নানান অভিযোগ জমা পড়ে। এলোপাথাড়ি ধরপাকড়ের সময় পুলিশ স্থানীয় পথচলতি বহু মানুষকেও আটক করেছিল বলে খবর পান দুবে। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তার পরে কলকাতা পুলিশ ৫৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করেও ঠিক কারা মূর্তি ভেঙেছিল, তার সদুত্তর মেলেনি। ধৃত অধিকাংশ অভিযুক্তই ছাড়া পেয়েছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, মূর্তি ভাঙার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে। কিন্তু তিনি কোনও রিপোর্ট জমা দেননি। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমারকে ২৬ মে সরিয়ে দেয় নবান্ন। গঠন করা হয় নতুন কমিটি। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, যে-ঘরে বিদ্যাসাগরের মূর্তিটি ছিল, সেখানকার সিসি ক্যামেরা ভাঙা ও অকেজো ছিল। পুলিশি তদন্তের মধ্যে সেটিও রাখা হয়েছিল। কলেজের মধ্যে কেন ওই ঘরটিরই সিসি ক্যামেরা অকেজো ছিল, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছিল পুলিশ। সে-দিনের ঘটনার যে-সব ছবি ও ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে মূর্তি ভাঙার মুহূর্তের ছবি ধরা পড়েনি। এক ব্যক্তি মূর্তির ভাঙা অংশ নিয়ে বাইরে ফেলে যাচ্ছে, এমনটা দেখা গেলেও ভাঙার দৃশ্য নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে।

পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, সরকারি তদন্তে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অকাট্য প্রমাণ কী ভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণই রিপোর্ট লেখার হাতিয়ার হতে পারে বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE