Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Old Age Home

বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান? টাকার হিসেবটা কিন্তু আগে বুঝে নেবেন

বিনামূল্যে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া ভার। টাকা লাগবেই। পকেটে কড়ি না থাকলে, এই বৃদ্ধাশ্রম 'ইন্ডাস্ট্রির' পরিষেবা পাবেন না।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

কুমার শঙ্কর রায়
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ১৫:৪১
Share: Save:

জীবনের গোধূলিবেলায় এসে অনেককেই বাস্তুহারা হতে হয়। এটা কঠোর সত্যি। নিজের বাড়িতে থেকে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েও, বৃদ্ধ বয়সে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয় অন্যের 'ওল্ড এজ হোম'-এ। এমন মানুষের সংখ্যা সমাজে বাড়ছে।

এমনটা নয় যে, ছেলেমেয়েদের অবহেলাতেই বাবা-মা’কে সবসময় বৃদ্ধাশ্রমে পাড়ি দিতে হয়। আরও নানান কারণ রয়েছে। এখন অনেক বয়স্ক মানুষই সন্তান-সন্ততিদের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকেন। অনেকে কাছাকাছি থাকলেও, আলাদা থাকেন। যতই বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকুন, বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে শুধু দুই বয়স্কের থাকার কষ্টটা, যাঁরা থাকেন তাঁরাই বোঝেন। আর একদম একা হলে তো কথাই নেই। তার চেয়ে অন্য প্রবীণদের সঙ্গে, গোড়ায় অচেনা হলেও, বৃদ্ধাশ্রমে থাকাটাই বেছে নেওয়া ভাল সমাধান হিসাবে।

শারীরিক কারণের জন্যেও কিছু বৃদ্ধবৃদ্ধা চলে যেতে যান ওল্ড এজ হোমে। তরুণরা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। বাবা-মা’র বৃদ্ধাশ্রমে থাকা নিয়ে ছেলেমেয়েদের একটা সামাজিক অস্বস্তি আছে বটে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে উপায় থাকে না। তবে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার বা রাখার আগে, আর্থিক খরচের দিকটা দেখতেই হয়। বিনামূল্যে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া ভার। টাকা লাগবেই। পকেটে কড়ি না থাকলে, এই বৃদ্ধাশ্রম 'ইন্ডাস্ট্রির' পরিষেবা পাবেন না। সিকিউরিটি ডিপোজিট, এন্ট্রি ফি, মাসিক খরচ, এমারজেন্সি ফান্ড এবং অন্যান্য নানান খরচ আছে। বৃদ্ধাশ্রমে থাকার আগে, বা কাউকে রাখার আগে, এই সব খরচখরচার দিকটা অবশ্যই ভাল করে দেখে নেওয়া দরকার। এবং অবশ্যই সেই বৃদ্ধাশ্রেমের পরিষেবা কেমন, দরকার সে সম্পর্কেও খোঁজ করে নেওয়া।

আরও খবর: সাইরাসের আবেদন নাকচ, টাটা থেকে অপসারণ বেআইনি নয়​

সিকিউরিটি ডিপোজিট

আজকাল অনেক বৃদ্ধাশ্রম খুলেছে। তবে কলকাতা-সহ এ রাজ্যের সব বৃদ্ধাশ্রমের পরিষেবা কিন্তু সমান নয়। একটু খোঁজ করলেই জানতে পারবেন, অনেক জায়গায় বৃদ্ধদের বেশ করুণ অবস্থায় কাটাতে হয়। ঠিক মতন খাওয়া-দাওয়াও পান না। হ্যাঁ, অপেশাদার-অনভিজ্ঞ-অমানবিক পরিচালনা হলে এ রকম ঘটতে পারে, ঘটেও থাকে। তাই, সংগঠিত বৃদ্ধাশ্রম 'ইন্ডাস্ট্রির' দ্বারস্থ হতে হয়। সেখানে আপনি বা আপনার বৃদ্ধ আত্মীয় হলেন 'ক্লায়েন্ট', কাকু বা কাকিমা নন। এ রকম গোছানো বৃদ্ধাশ্রমে সব কিছু টাটকা, টিপটপ ঘর, হাসির মুখে ব্যবহার, নানান আনন্দ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।

আপনার বয়স ৫৫ হলে, আপনি বেশির ভাগ বৃদ্ধাশ্রমেই প্রবেশাধিকার পাবেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোনকে একসঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়। আমাদের নিরীক্ষা বলছে, এই ঝাঁ তকতকে জায়গাগুলিতে আপনাকে থাকতে হলে মেম্বারশিপ দেওয়া হবে টাকার বিনিময়ে, বা কোন ট্রাস্টে দান করতে হবে, বা সোজাসুজি আবেদন করতে হবে ৪০০-৫০০ টাকার ফর্ম কিনে। রাস্তা যাই হোক না কেন, সিকিউরিটি ডিপোজিট দিতেই হবে।

আপনি যে রকম ঘরে/বাড়িতে থাকবেন, তার উপর নির্ভর করবে ডিপোজিটের অঙ্ক। একদম কম করে ধরলে ৪ লাখ টাকা দিতে হবে, যদি 'টুইন শেয়ারিং'-এ থাকেন। এ রকম কম সিকিউরিটি ডিপোজিট অবশ্য খুব কম জায়গাতেই আছে। বেশির ভাগ বৃদ্ধাশ্রমে, সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট দিতে হয়, যদি ছোট ঘরে থাকতে চান সিঙ্গেল বেড ব্যবহার করে। একটু বড় ঘর বা ছোট ফ্ল্যাট নিতে চাইলে দিতে হবে ১০-২৫ লাখ টাকা।

আরও খবর: নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা স্বামীর, পুলিশে খবর দিলেন স্ত্রী

পুরো সিকিউরিটি ডিপোজিটের টাকা একবারে যাঁরা দিতে পারে না, তাঁদের জন্যে কিছু সংস্থা স্কিম এনেছে। যেমন ২০ লাখ টাকার বদলে আপনাকে দিতে হবে মাসে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে। বৃদ্ধাশ্রম পরিচালকরা বলেন যে— অধিবাসীদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমানতের নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে— বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, এই টাকা ব্যবহার করা যাবে। কিছু সংস্থা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে— কোনও পরিস্থিতিতেই এই সিকিউরিটি ডিপোজিট ব্যক্তিগত ব্যয় বা বাসিন্দাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে না।

এই সিকিউরিটি ডিপোজিট ফেরত পাওয়ার নানান নিয়ম আছে। যেমন, কিছু জায়গাতে ৬০ শতাংশ ফেরত দেওয়া হয় পৃষ্ঠপোষক বা আইনগত উত্তরাধিকারী বা স্বয়ং আবাসিককে। বাকি ৪০ শতাংশ বাধ্যতামূলক ভাবে একটি ফান্ডে দিয়ে দেওয়া হয়। যদি কোনও উপরি খরচ দেখাতে পারে, তা হলে ৬০ শতাংশ থেকে সেই টাকাও বাদ যাবে।

আরও পড়ুন: সাতসকালে জেলের ভিতরে খুন উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার মুন্না বজরঙ্গি​

কিছু সংস্থা ৭০-৮৫ শতাংশ ডিপোজিটের টাকা দিয়ে দেয়, কিন্তু সেটা বৃদ্ধাশ্রম ছাড়ার এক মাস পরে। যত টাকাই ফেরত পান, কোনও সুদ বা ইন্টারেস্ট কিন্তু পাবেন না। কিছু বৃদ্ধাশ্রমে, সিকিউরিটি ডিপোজিট ছাড়াও, আলাদা 'এন্ট্রি ফি' ৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়, যা ৬ মাসের মধ্যে ছাড়লে ফেরত পেতে পারেন। ৬ মাস কেটে গেলে, এক পয়সা 'এন্ট্রি ফি' ফেরত পাবেন না।

মাসের টাকা

ঠিক যেমন সিকিউরিটি ডিপোজিট, তেমনই আপনি কেমন ঘরে থাকবেন সেটার উপর নির্ভর করেই প্রত্যেক মাসে আপনাকে টাকা দিতে হবে। এই টাকার বিনিময়ে আপনি পাবেন তিন বেলা খাবার, চা-কফি, বিকেলের স্ন্যাক্স, ইলেক্ট্রিসিটি, এবং টিভি/রেডিও। ঘরে এয়ার-কনডিশনিং ব্যবস্থা বা হিটার থাকলে খরচ বেশি। এ ছাড়া, ঘরদোর পরিষ্কার করার লোক থাকবে। প্রাথমিক চিকিৎসার কোনও দরকার হলে সেটাও দিয়ে দেবে বৃদ্ধাশ্রম।

ন্যূনতম খরচ মাসে ১০,০০০ টাকা, সাথে ট্যাক্স। মানে বছরে ১.২০ লাখ টাকা লাগবেই। বেশির ভাগ বৃদ্ধাশ্রমে প্রত্যেক বছরের শেষে মাসিক খরচ ৩-৫ শতাংশ হারে বাড়ে সেটা খেয়াল রাখবেন। বেশির ভাগ বৃদ্ধাশ্রমে একটা ঘর বা ছোট ফ্ল্যাটে থাকার জন্যে মাসে ১৩-১৮ হাজার টাকা দিতে হয়। কিছু বৃদ্ধাশ্রমে, যেখানে বড় বাড়ি বা কটেজ আছে, মাসে ২৫-৩০ হাজার দিয়ে হয়। নন-এসি ঘর নিলে কিছু টাকা কম। প্রত্যেক মাসের ১ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে টাকা না দিতে পারলে জরিমানা হতে পারে।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের পথ খোলা রেখেই বিজেপি-র সঙ্গে দর কষাকষি নীতীশের

অনেকে ১-২ মাসের জন্যে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান যাতে পরখ করে নিতে পারেন কী রকম ব্যবস্থা। এই ক্ষেত্রে দৈনিক রেট বাঁধা আছে। ১৫০০-২৫০০ এ রকম খরচ। মাসের হিসাব করলে অনেক বেশি টাকা মনে হবে।

কিছু বৃদ্ধাশ্রমে মাসের টাকা আগে নিয়ে নেওয়ার নিয়ম আছে। এক সঙ্গে ছয় মাসের টাকা জমা দিতে বলা হতে পারে।

অনেক সংস্থা বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালকদের কাছে আলাদা করে ৫-১০ হাজার টাকা রাখতে বলেন। কারণ, এই পরিমাণ বাসিন্দদের ব্যক্তিগত খরচ যেমন ওষুধ, সিগারেট, জামাকাপড়, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি ভাড়া, ডাক্তারের ফি, ব্যক্তিগত আয়া, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন চশমা, ট্রানজিস্টার ইত্যাদি মেরামত করার খরচ।

আপনার সাথে পরিবারের কেউ দেখা করতে গেলে টাকা দিতে হয় না। কিন্তু যদি তাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে আপনার সঙ্গে এক-দু দিন থাকতে চান, তা হলে ঘর ভাড়া নিতে হবে এবং আলাদা টাকা দিতে হতে পারে।

আরও খবর: মাথার উপর নিজেই উড়তে উড়তে যাবে এই ছাতা​

এ ছাড়া, 'ইমারজেন্সি' ফান্ডে টাকা রাখতে বলা হতে পারে। যেহেতু আজকাল হাসপাতালে গেলেই বিশাল খরচ, তাই বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালকরা খুবই সতর্ক। একটি 'ইমারজেন্সি' ফান্ড করা হয় যেখানে আলাদা ভাবে টাকা রাখতে হয়।

বুঝতেই পারছেন, বৃদ্ধাশ্রম মানেই অনেক টাকা ব্যাপার। তা ছাড়া, বছর বছর এই খরচ বাড়বে। সুতরাং, আর্থিক দিকটা ভাল করে জেনেবুঝে এবং খোঁজখবর করেই বৃদ্ধাশ্রমের দিকে পা বাড়ান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE