জগন্নাথদেবের রথ ছুটবে পথ কাঁপিয়ে, ঝেঁপে নামবে বৃষ্টিও। দৈবিক-প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বলা হোক বা নিছক সমাপতন, এ-রকম একটা রেওয়াজ আছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। কিন্তু গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, রথযাত্রা মানেই বৃষ্টি, এই ধারণা ক্রমশ যেন বদলে যাচ্ছে। আজ, বৃহস্পতিবার রথযত্রায় বৃষ্টির আশা কম বলেই আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস।
কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের জোগান রয়েছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি স্থলভূমিতে ঢুকে মধ্য ভারতের দিকে চলে যাওয়ায় রথের দিন গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা গিয়েছে কমে। ‘‘গত কয়েক দিন যে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে, রথযাত্রায় তেমনটা হয়তো হবে না,’’ বলছেন সঞ্জীবাবু। তবে কিছু আবহবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, বর্ষাকাল বলেই কোনও কোনও এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কমবেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহবিজ্ঞানীদের মতে, রথযাত্রার সঙ্গে বৃষ্টির কোনও বিজ্ঞানসম্মত সম্পর্ক নেই। পঞ্জিকামতে রথ বর্ষাকালে হয় আর বর্ষাকাল বলেই বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। সেটা ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্যের জন্যই। পুরনো নথিপত্র বিশদ ভাবে ঘাঁটলে দেখা যেতে পারে, অতীতেও বহু বার রথের দিন গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টি হয়নি। কোনও কোনও বছর কোনও এক বা একাধিক এলাকায় বৃষ্টি হলেও অন্যান্য অঞ্চল শুকনোই ছিল। কোনও কোনও বছর অবশ্য রথের দিন অতিবৃষ্টি হয়েছে।
তবে বাঙালির কাছে রথ মানেই বৃষ্টি, পাঁপড়ভাজা আর কাদা প্যাচপেচে রথের মেলার মাঠ। তাই রথের দিন বৃষ্টি না-হলে বাঙালির আক্ষেপ থেকে যায়। এখন সেই আক্ষেপের সঙ্গে জুড়েছে জলবায়ু বদল কিংবা বর্ষার চরিত্র বদলের তত্ত্ব। পরিবেশ ও আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, বর্ষার চরিত্র বদলে গিয়েছে। তার ফলে পাঁজিতে কালটা বর্ষা হলেও রথের দিন বৃষ্টি হবে কি না, সেই বিষয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বৃষ্টির সন্ধ্যায় পাঁপড়ভাজা আর কাদামাখা রথের মেলার মাঠের মজাও কমছে।
আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই অবশ্য বর্ষার চরিত্র বদলের তত্ত্ব বদল মানতে রাজি নন। সঞ্জীববাবুর মতে, কোনও বছরের বর্ষার চরিত্র তার আগের বা পরের বছরের সঙ্গে মেলে না। একে ‘ভ্যারিয়েবিলিটি’ বলা হয়। তার মানেই এই নয় যে, বর্ষার চরিত্র বদলে যাচ্ছে। এর আগেও বহু বার রাজ্যে কম বর্ষা হয়েছে, সেই তথ্য আলিপুর আবহাওয়া দফতরের নথিতে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy