সে দিন বীজ ছড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
প্রায় দু’বছর বাদে, দ্বিতীয় দফায় সিঙ্গুরের সেই জমিকে ফের ‘চাষযোগ্য’ করতে নামছে রাজ্য সরকার।
বর্ষা বিদায় নিয়েছে। তাই সব কিছু ঠিক থাকলে আজ, সোমবার বা পরের দু’এক দিনের মধ্যে ফের ওই জমি (টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল) সাফ করে, চাষিদের জন্য চিহ্নিত করে দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন হুগলি জেলা প্রশাসনের এক কর্তা। যাতে চাষিরা ফের চাষ করতে পারেন। প্রশাসনিক এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ভুক্তভোগী চাষিরা। তবে, কয়েকজনের ক্ষোভও রয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, প্রশাসনের দেরিতে ঘুম ভাঙল।
রাজ্যের কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে সিঙ্গুরের ওই জমি চাষিদের জন্য চিহ্নিতকরণের কাজ হয়েছিল। এখনও কিছু কাজ বকেয়া আছে। চাষিদের আবেদনের ভিত্তিতেই সেই বকেয়া কাজ এখন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ সরকারি এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রাজনীতিই দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসকদল নিজেদের পালে সিঙ্গুরের হাওয়া ধরে রাখতে চাইছে।
জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘ওই জমিতে শিল্পও হল না, কৃষিও হল না। ওই জমিতে আর কোনও দিনই চাষ হবে না। সরকার ওখানে চাষিদের জমি চিহ্নিতকরণের কাজও এখনও শেষ করেনি।’’ অভিযোগ মানতে চাননি সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দল বরাবর সিঙ্গুরের চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। কিছু সমস্যা রয়েছে। তা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: নিজের দলের নেতাকে ‘অ্যারেস্ট’ করাতে নির্দেশ দিয়ে ফের বিতর্কে অনুব্রত
এখন সিঙ্গুরে জমির যা অবস্থা। নিজস্ব চিত্র
টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য সিঙ্গুরের প্রায় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বাম সরকার। কিন্তু ২০১৬ সালের অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট ওই অধিগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে। রাজ্য সরকারকে চাষিদের সেই জমি ফিরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক ধাপ এগিয়ে ওই জমিকে ‘চাষযোগ্য’ করে ফেরানোর কথা ঘোষণা করেন। মোট ১৭টি সরকারি দফতর সিঙ্গুরের মাঠে নামে। ভেঙে ফেলা হয় গাড়ি কারখানার জন্য তৈরি যাবতীয় ছাউনি, কংক্রিটের নির্মাণ। নতুন করে মাটিও ফেলা হয়। তারপরে আল তৈরি করে চাষিদের জমি চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই জমিতে গিয়ে সর্ষেবীজ ছড়িয়ে চাষিদের দেখিয়ে দিয়ে এসেছিলেন, রাজ্য সরকার কথা রাখল।
তারপরে ওই জমিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু চাষ হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের বর্ষার পরেই ছবিটা বদলে যায়। বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে যায় বেশিরভাগ জমির আল। মাঠে ফেলা নরম মাটি ধুয়ে টাটাদের প্রকল্পের কংক্রিট বেরিয়ে আসে। কোথাও আবার জল জমে জমি ছোটবড় ডোবার চেহারা নেয়। প্রবল বৃষ্টিতে ওই জমির আশপাশের পুকুর উপচে যায়। সেই জলও চলে আসে জমিতে। কেউ কেউ মাছ ধরাও শুরু করে দেন। বর্ষা কেটে যাওয়ার পরেও সেই জল নামেনি। জমিতে গজিয়ে উঠতে থাকে উলুখাগড়া, আগাছার বন। বাড়তে থাকে সাপের উপদ্রব। বর্তমানে প্রায় হাজার একরের ওই জমির অল্প জায়গাতেই চাষ হয়।
‘‘যে জমিকে নিজের বলে চেনাই যায় না, সেখানে চাষ করব কী করে?’’— এই ছিল চাষিদের প্রশ্ন। ফলে, প্রায় দেড় বছর ধরে ওই জমি নিয়ে চাষিদের অসন্তোষ বাড়ছিল। সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য দুধকুমার ধাড়া বলেন, ‘‘প্রকল্প এলাকার ৯৯৭ একরের মধ্যে মেরেকেটে ২০০ একর জমি এখন চাষের উপযোগী আছে। বাকি পুরোটাই জঙ্গলের জন্য ব্যবহারের অনুপযুক্ত। সেই কারণেই চাষিরা জমিতে নামতে পারেন না।’’
এই দেড় বছরে ভুক্তভোগী চাষিরা বারবার জেলা প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এ বার নড়ে বসছে প্রশাসন। বেড়াবেড়ির এক চাষি সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে বলেন, ‘‘এতদিনে সরকারের টনক নড়ল। মাঝখান থেকে দু’টো বছর বেকার গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy