Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মমতার ডাকা সর্বদল বৈঠকে ত্রাণের খরচ নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের

লন্ডন সফর কাটছাট করে রাজ্যের বন্যাত্রাণের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন সাত দিন আগে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদারকিতে এই ক’দিনেই ৯৯২ কোটি টাকার ত্রাণ বিলি করে ফেলেছে সরকার। শনিবার নবান্নের সর্বদলীয় বৈঠকে এই অর্থ খরচ নিয়েই প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।

নবান্নে চলছে বৈঠক। প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।

নবান্নে চলছে বৈঠক। প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ১৯:৪৭
Share: Save:

লন্ডন সফর কাটছাট করে রাজ্যের বন্যাত্রাণের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন সাত দিন আগে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদারকিতে এই ক’দিনেই ৯৯২ কোটি টাকার ত্রাণ বিলি করে ফেলেছে সরকার। শনিবার নবান্নের সর্বদলীয় বৈঠকে এই অর্থ খরচ নিয়েই প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।

তাঁদের প্রশ্ন, কোথায় এত টাকা খরচ হল? চোখে তো দেখা গেল না। যদি সরকার এই টাকা খরচ করেই থাকে, তাহলে ব্লকস্তরে সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তা যাচাই করা হোক। পাশাপাশি এখন থেকে ত্রাণ বিলির তদারকিতে সর্বদলীয় কমিটি গড়ারও প্রস্তাব দিয়েছে বিরোধীরা।

যদিও সরকার বিরোধীদের এই প্রস্তাব মানেনি। কিন্তু আগামী ১৮ অগষ্ট নবান্নে আবার একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে ত্রাণ বিলি বন্টনের বিস্তারিত বিরোধী দলকে জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আগামী ১২ অগষ্ট দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বন্যাত্রাণে কেন্দ্রীয় সহায়তা নিয়ে রাজ্যের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা বার্তাও বিরোধী দলতে জানাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মনস্থ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে অবশ্য কেউ আপত্তি করেননি। যদিও সাত দিনে প্রায় হাজার কোটি টাকার ত্রাণ বন্টনের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সবারই।

বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলেন,‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে ৯৯২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কোথায়, কীভাবে এই টাকা খরচ হল বোঝা যাচ্ছে না। তালিকা যা দিয়েছেন তাতে তো ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলেও মনে হচ্ছে না।’’ এরপরেই সূর্যবাবু প্রশ্ন তোলেন, ত্রাণ বিলি তো হচ্ছে ব্লক স্তরে। সুতরাং ব্লক এবং জেলাস্তরে সর্বদলীয় কমিটি কেন গড়া হচ্ছে না? সবাই থেকে ত্রাণ বিলি করলে তো ভালই। স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।‘‘কিন্তু সরকার সেই দাবি মানছে না। তাই আমি এই বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট নয়’-বলেন বিরোধী দলনেতা।

সরকার অবশ্য বিরোধী দলনেতার এই দাবি মানতে নারাজ। সরকারের যুক্তি, বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের এবার রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু ইতিমধ্যেই ৯৯২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তা রাজ্যের কোটার চেয়ে ১৪৬%বেশি। এক সরকারি কর্তার বক্তব্য,‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ত্রাণের কাজ তদারকি করেছেন তাতে আরও টাকা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবি তুলবেন। রাজ্যের জন্য ক্রাণের টাকা চাওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধীরা কোথায় সরকারের পাশে থাকবেন, এক্ষেত্রেও বিরোধিতা করছেন। এতেই বন্যার্তরা তাঁদের দেখছে।

বামফ্রন্টের মতো অন্য বিরোধী দলগুলিও এ দিন ত্রাণ বন্টনের বিরোধিতা করেছেন। কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা মহম্মদ সোহরাব বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত সমস্ত দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রাণ কমিটি আরও বেশি পরিমাণ সামগ্রী দিতে হবে। ত্রিপলের খুব দরকার। কৃষি ঋণ মকুব করতে হবে।’’ সোহরাব আরও জানান, এত বড় বন্যা হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হেলদোল নেই। ডিভিসি-র আধুনিকীকরণের জন্যও দাবি জানিয়েছি।

বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন,‘‘ত্রাণ বণ্টন নিয়ে বহু অভিযোগ রয়েছে। ত্রাণ দিতে গিয়ে কেউ যাতে বাধার মুখে না পড়ে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’’

এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করের বক্তব্য,‘‘ ত্রাণ বণ্টনে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ব্যর্থ, ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে দলের হাত দিয়ে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা বিলি করা হোক।’’

যদিও এদিনের বৈঠক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে কিছু বলেননি। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্যা ত্রাণে এরকম কাজ অতীতে কোনও দিন দেখিনি। এরকম ত্রাণ দেওয়াও কোনও দিন হয়নি। আমি নিজে সাক্ষী। কোথাও ত্রাণ দেওয়া নিয়ে এবার বিক্ষোভ হয়নি। আগে ত্রাণ নিয়ে অনেক বিক্ষোভ আমরা দেখেছি। কোনও জায়গায় দলবাজি হয়নি। জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপাররা ত্রাণ বন্টন করেছেন।’’

সুব্রতবাবুর কথায়,‘‘বিরোধীদের কথার কোনও যুক্তি নেই। বাম জমানায় সিপিএম কখনও সর্বদলীয় ত্রাণ কমিটি গঠন করেছে কি? ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে একবার সেই আমলের অর্থমন্ত্রী এবং ত্রাণমন্ত্রীকে পশ্চিম মেদিনীপুরে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। আর আমি সেই মেদিনীপুরে গিয়ে ত্রাণের তদারকি করে এলাম। সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ধ্বনি করে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE