Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন বৈধই

স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন স্কুল সার্ভিস কমিশন রয়েছে, তেমনই মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্য বামফ্রন্ট সরকার ২০০৮-এ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তৈরি করে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অবশেষে অচলাবস্থা কাটতে চলেছে। মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারের তৈরি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকেই আজ সাংবিধানিক ভাবে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের বেঞ্চের রায়, নিয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে কোনও শর্তহীন ক্ষমতা থাকতে পারে না।

স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন স্কুল সার্ভিস কমিশন রয়েছে, তেমনই মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্য বামফ্রন্ট সরকার ২০০৮-এ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তৈরি করে। কিন্তু তার আগে ২০০৭-এ বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের ৬১৪টি মাদ্রাসাকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়েছিল। ফলে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইন চালুর পরে অভিযোগ ওঠে, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে রাজ্য সরকার নাক গলাচ্ছে।

এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কাঁথির একটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট ওই আইনকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। যুক্তি ছিল, সংবিধানের ৩০-তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন ও তার পরিচালনার পূর্ণ অধিকার সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিদের হাতেই থাকবে। এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষমতা ফের চলে যায় মাদ্রাসাগুলির হাতে। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায় ছিল, সার্ভিস কমিশন যাদের বাছাই করেছে, তাদের নিয়োগ করা বা না-করার ক্ষমতাও মাদ্রাসার হাতেই থাকবে।

এতে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রথমে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায়নি। কিন্তু কমিশনের পরীক্ষায় বাছাই হওয়া পরীক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তখন রাজ্য সরকারও হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩-তে নতুন নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে তার আগে চাকরি পেয়ে যাওয়া জনা চল্লিশেক শিক্ষককে কাজ চালিয়ে যেতে বলে। ফলে ২০১৩-র পর থেকে গত ছয় বছরে রাজ্যের কোনও মাদ্রাসায় নিয়োগ হয়নি। eহাইকোর্টে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, ‘‘এর ফলে মুসলিম সম্প্রদায় উপকৃত হবে। ২০১৩-র পর থেকে ৬০০-র বেশি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা কাটতে চলেছে।’’

সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষমতা কাদের হাতে থাকবে, সেই প্রশ্নটি শুধু মুসলিম নয়, খ্রিস্টানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। এক, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুই, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা যে সব প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পুঁথি, বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের মতে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওই সংখ্যালঘু ধর্মে বিশ্বাসীরাই পড়াতে পারবেন। কিন্তু শিক্ষার বিষয় আর পাঁচটা ধর্মনিরপেক্ষ স্কুল কলেজের মতো হলে মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ হওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি, কোনও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিক রক্ষাকবচের দোহাই দিয়ে পেশাদার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধার ভিত্তিতে ছাত্রদের নিয়োগ আটকাতে পারে না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমতা নেই বলে সুপ্রিম কোর্টের মত। পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইনও সংবিধান লঙ্ঘন করেনি বলে জানিয়েছে আদালত। কারণ, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ও জাতীয় স্বার্থেই আইনটি তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madrasah Service Commission Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE