প্রতীকী ছবি।
বয়স চোদ্দো হয়ে গেলেই আইন অনুযায়ী এখন এ দেশে কাউকে শিশু শ্রমিক বলা যাবে না। তা বলে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ, পঙ্গু রোগীর ফিজিওথেরাপি চোদ্দো-পনেরোর কিশোর ফিজিওথেরাপিস্টকে দিয়ে করানো হলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য?
কিংবা ল্যাবরেটরি, ব্লাডব্যাঙ্ক, এক্স-রে, ইসিজি ক্লিনিকে যদি চোদ্দো-পনেরো-ষোলোর কিশোর-কিশোরীরা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করে, সেটা কি কাম্য? নাকি তা রোগীর পক্ষে নিরাপদ?
এই সব প্রশ্নকে ঘিরে বিতর্কের ঢেউ উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে। বিতর্কের সূত্রপাত নবগঠিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যালায়েড অ্যান্ড প্যারামেডিক্যাল কাউন্সিল’-এর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, ডায়েটিশিয়ানদের মতো অনেকে এই কাউন্সিলের আওতায় আসবেন এবং সেখানে নথিভুক্ত হবেন। এঁদের কাজে নজরদারি চালাবে কাউন্সিল এবং দোষ করলে শাস্তিও দেবে।
১৬ মার্চ স্বাস্থ্য ভবনে কাউন্সিলের সাধারণ সভায় ঠিক হয়েছে, বয়স ন্যূনতম ১৪ বছর এবং অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেই ২৭০ ঘণ্টা থেকে ৪৫০ ঘণ্টার কিছু সার্টিফিকেট কোর্স করে নতুন কাউন্সিলের ‘অ্যাসোসিয়েট মেম্বারশিপ’ পাওয়া যাবে। এবং ওই সদস্য-পদের প্রমাণপত্র পেলেই সেটাকে ব্যবহার করা যাবে ‘রেজিস্ট্রেশন’ হিসেবে। নিয়ম অনুযায়ী ওই সদস্য-পদ দেখিয়েই বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালেও কাজের ছাড়পত্র পাবে ১৪-১৫ বছরের নাবালকেরা।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের সরকারপন্থী সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সমীর মণ্ডলের কথায়, ‘‘এত দিন অন্তত সরকারি ক্ষেত্রে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স ও যোগ্যতামানের ছাঁকনি থাকত। তার জন্য বিজ্ঞান শাখায় ভাল নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কয়েক বছরের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা করতে হত। কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে এ বার সেটাও লাটে উঠল। স্বল্পশিক্ষিত, নেহাত কিশোরদের দিয়ে সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা সামলাতে চাইছে।’’
স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, এত দিন বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে গোপনে কিশোর-কিশোরীদের দিয়ে কাজ করানো হত। এখন সেটা খোলাখুলি হবে। এতে তাদের অনেকে শোষণের শিকার হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শ্রম দফতরও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘চোদ্দো হয়ে গেল মানেই একটি ছেলে বা মেয়ে যে-কোনও পেশায় ঢুকে কাজ করবে, এটা মোটেই অনুমোদিত হবে না। সে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, রেজিস্ট্রেশনও পেতে পারে। কিন্তু ১৮ না-হওয়া পর্যন্ত সে কাজ করতে পারবে না।’’ ধন্দে স্বাস্থ্য দফতরও। ‘‘প্রাথমিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য দফতরে এখন এমন পদ নেই, যেখানে ১৪-১৫ বছরের কাউকে নিয়োগ করা যায়। শেষ পর্যন্ত সেটা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে,’’ বলেন কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন, চিকিৎসক আশুতোষ ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy