Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাড়ে তিন হাজার বছর আগের কারিগরদের গ্রাম

অসুরালয় গ্রামের অসুরডাঙার ঢিবি থেকে একটু একটু করে যে সব তথ্য মিলেছে, তাতে অনুমান করা হচ্ছে, সাড়ে তিন হাজার বছর আগে এই এলাকায় মানুষের বসতি ছিল।

পুরনো দিনের পুঁতি। —নিজস্ব চিত্র।

পুরনো দিনের পুঁতি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

বীরভূমের মল্লারপুরের পারচন্দ্রহাটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের খননকার্যে সামনে এসেছে ইতিহাস।

মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রায় ৭,৭০০ বর্গ মিটার জুড়ে ছড়ানো এই এলাকার কিছুটা অংশে খনন হয়েছে। অসুরালয় গ্রামের অসুরডাঙার ঢিবি থেকে একটু একটু করে যে সব তথ্য মিলেছে, তাতে অনুমান করা হচ্ছে, সাড়ে তিন হাজার বছর আগে এই এলাকায় মানুষের বসতি ছিল। যাঁরা এখানে থাকতেন, তাঁরা খুব সম্ভবত হাতের কাজে খুবই দক্ষ ছিলেন। নানা প্রাণীর হাড় ও পাথর নিয়ে কাজ করতেন। এত নিখুঁত করে পাথর ফুটো করার নিদর্শন আর খুব কম জায়গা থেকেই মিলেছে। সে কাজ করতে তাঁরা আগুনও ব্যবহার করতেন। বড় করে আগুন জ্বালিয়ে রাখার বন্দোবস্ত ছিল। সেখানে খুবই উচ্চ তাপ অনেকক্ষণ ধরে রাখা যেত। এই কৌশল যাঁরা জানতেন, তাঁরা গ্রামীণ সভ্যতায় অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এখানে পাওয়া গিয়েছে, পুঁতি, প্রাণীর হাড় ও পাথরের অস্ত্রও। পুরাতত্ত্ববিদদের ধারণা, রাঢ়বঙ্গে এমন জায়গা
খুব বেশি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান রজত সান্যালের নেতৃত্বে এই খনন হয়েছে। রজতবাবু বলেন, ‘‘এই কারিগরেরা বসতি তৈরি করেছিলেন মানে এই এলাকায় তাঁদের কাজের কদর ও চাহিদা ছিল। যে মানের কাজ তাঁরা করতেন, তাতে অনুমান করা যায়, গোটা এলাকাতেই গ্রামীণ সভ্যতার প্রাথমিক বিকাশ ঘটেছিল।’’

কোটাসুর-সহ বড় একটি এলাকার চাহিদা এই গ্রামীণ কারিগরেরা মেটাতেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই এলাকা থেকে ময়ূরাক্ষী ধরে কোটাসুর বেশি দূর নয়। সেখান থেকেও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন মিলেছে। অসুরডাঙা এলাকা থেকে নানা ধরনের কালো-লাল মাটির পাত্র পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে হাঁড়ি ও বাটি।

অসুরডাঙার এই ঢিবিটি মহাভারতের বকাসুরের আস্তানা ছিল বলে লোকমুখে শোনা যায়। মহাভারত মতে, যে বকাসুরকে মেরেছিলেন ভীম। বকাসুরের ভয়ে অসুরডাঙাকে লোকে এড়িয়ে চলত। তাই ঢিবির ভিতরের কোনও বস্তুই বেহাত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE