Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতাল নয়, গুরুর ছবিতে ভরসা করে মৃত্যু শিশুর

খবর পেয়ে পড়শিরা জোর করাতেও শুনতে হয়েছিল, ‘আপনাদের ভাবতে হবে না, গুরুদেব আছেন, তিনিই যা করার করবেন।’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:২৫
Share: Save:

পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, শিশুর জন্ম হয়েছে গুরুদেবের কৃপায়! জন্ম-মৃত্যু তাঁরই হাতে। বাঁচালে একমাত্র তিনিই বাঁচাবেন। চিকিৎসকেরা গুরুদেবের ‘অসীম ক্ষমতা’র কাছে তো নিছক নস্যি!

সেই অন্ধবিশ্বাসের জেরে, মায়ের কোলে স্তন্যপানের সময়ে শ্বাসনালীতে দুধ চলে যাওয়ায় হাঁসফাঁস করা তিন মাসের শিশুকে সেই পারিবারিক গুরুদেবের ঢাউস ছবির নিচেই ফেলে রেখেছিলেন বাবা-মা। আর ঘণ্টা দেড়েক ধরে সেই ছবির সামনে মেঝেতে পাতা কাঁথায় অনবরত ছটফট করে গেল শিশুটি।

খবর পেয়ে পড়শিরা জোর করাতেও শুনতে হয়েছিল, ‘আপনাদের ভাবতে হবে না, গুরুদেব আছেন, তিনিই যা করার করবেন।’

আরও পড়ুন: শ্বাসনালীতে দুধ ঢুকে মৃত সদ্যোজাত

শান্তিপুরের পাঁচপোতা এলাকার ওই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আলতাব হোসেন শেখ প্রায় জোর করেই পাঁজাকোলা করে শিশুটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, শ্বাসরোধ হয়ে মারা গিয়েছে শিশুটি।

গুরুর ‘অলৌকিক ক্ষমতা’-র প্রতি শিশুর পরিজনের ভক্তি অবশ্য তাতেও টলেনি, হাসপাতাল থেকে শিশুটির দেহ ফিরিয়ে আনার পরেও ফেলে রাখা হয়েছিল গুরুদেবের সেই ছবির সামনে। আর, শিশুটির দাদু শরদিন্দু বিশ্বাস নাগাড়ে বলে চলেন, ‘‘কই, হাসপাতাল আমার নাতিকে বাঁচাতে পারল? এক মাত্র গুরুদেবই পারেন ওর শরীরে প্রাণ ফেরাতে।’’

আর সহ্য করতে না-পেরে পাড়ার লোকজনই খবর দেন পুলিশে। শান্তিপুর থানা থেকে পুলিশ এসে দেহটি নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য।

এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পেশায় টোটো চালক। গোটা পরিবারই সুভাষচাঁদ নামে এক ধর্মীয় গুরুর ভক্ত বলে জানা গিয়েছে। বছর পাঁচেক আগে প্রসেনজিতের সঙ্গে বিয়ে হয় শান্তিপুরের গড় এলাকার বাসিন্দা পিঙ্কির। কোনও ভাবেই তাঁদের সন্তান হচ্ছিল না। শেষমেশ সাড়ে তিন মাস আগে তাঁদের পুত্র সন্তান হয়। নাম রাখা হয় পাপ্পু। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ধারণা, গুরুদেবের জন্যই পরিবারের সন্তানলাভ হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত তিনটে নাগাদ ছেলেকে বুকের দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন পিঙ্কি। প্রতি দিনের মতো ভোর চারটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে নাতির কাছে যান ঠাকুমা শেফালী বিশ্বাস। কোলে তুলে দেখেন, শিশুটির চোখ উল্টে গিয়েছে। সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরেই তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখা হয় ওই ছবির সামনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE