Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গান কই! হাসপাতালে ছটফটানি আরাবুলের

এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকে এ ভাবেই রয়েছেন খুনের অভিযোগে ধৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। ১০ নম্বর কেবিনের ‘এ’ এবং ‘বি’— দু’টি শয্যাই ছেড়ে রাখা হয়েছে তাঁর জন্য।

‘‘গান ছা়ড়া এক মুহূর্ত নয়,’’ হাসপাতালে বসে বললেন আরাবুল।

‘‘গান ছা়ড়া এক মুহূর্ত নয়,’’ হাসপাতালে বসে বললেন আরাবুল।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৮ ০৩:৪৭
Share: Save:

সকালে কেবিন এবং কেবিন লাগোয়া বারান্দায় ঘণ্টাখানেকের পায়চারি। সঙ্গে ব্যায়াম। দুপুরে খাওয়া সেরে দু’ঘণ্টার ঘুম। পরিবার এলে অবশ্য ঘুম বাদ। তখন শুধুই খোশগল্প। কেবিনেই চলছে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ‘বৈঠক’! তবে এত কিছুর মধ্যেও আফসোস, এখনও ‘সাউন্ডসিস্টেম’ নিয়ে এল না ছেলে! ঘনিষ্ঠ মহলে তাই বলেছেন, ‘‘সব ছাড়তে পারি। কিন্তু গান ছা়ড়া এক মুহূর্ত নয়।’’

এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকে এ ভাবেই রয়েছেন খুনের অভিযোগে ধৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। ১০ নম্বর কেবিনের ‘এ’ এবং ‘বি’— দু’টি শয্যাই ছেড়ে রাখা হয়েছে তাঁর জন্য। পরিবার তো বটেই, দলীয় সহকর্মীরাও ওই শয্যায় জমিয়ে বসে ‘আলোচনা’ সারছেন আরাবুলের সঙ্গে। গত ১১ মে পুলিশ আরাবুলকে গ্রেফতার করে। বুকে ব্যথা হয়েছিল বলে দাবি করায় ১৯ মে আরাবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

শনিবার দুপুরে এসএসকেএমে গিয়ে দেখা গেল, বন্দির কেবিনের সামনে কাঠের চেয়ার পেতে বসে ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’র ছায়াসঙ্গীরা। একজন পুলিশকর্মীও আছেন। কাছাকাছি যেতেই কয়েক জন ঘিরে ধরে প্রশ্ন করলেন, কী চাই? সংবাদমাধ্যমের লোক বলায় দাঁড় করিয়ে রাখা হল প্রায় আধ ঘণ্টা। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল, ভিতরে বেডে বসে আরাবুল। মুখোমুখি বেডে স্ত্রী। পাশে দাঁড়ানো আরাবুলের ছেলে হাকিমুল। রয়েছেন এক উর্দি পরা পুলিশকর্মীও।

ডাক পড়তেই তল্লাশি শুরু করলেন আরাবুলের সঙ্গীরা। মোবাইল এবং নোটপ্যাড জমা রেখে কেবিনে ঢোকা গেল। আরাবুল বললেন, ‘‘বলুন, কী বলবেন।’’ শরীর কেমন? বলেন, ‘‘সুগার বেড়ে গিয়েছে। সকালের দিকে কিছুটা ভাল থাকছি। রাতেই সমস্যা। নিয়ম করে সকালে হাঁটছি। ব্যায়ামও করছি।’’ আরও বললেন, ‘‘এখানকার খাবার মুখে তোলা যায় না। বাড়ির খাবারই নিচ্ছি।’’ তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গ উঠতেই সাফ জবাব, ‘‘এ ব্যাপারে কথা নয়।’’ এর মধ্যেই বেজে উঠল মোবাইল ফোন। ফোন ধরে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘বলেছিলাম, জিতব। দ্রুত ফিরছি এলাকায়।’’ প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে জয়ী হয়েছেন আরাবুল। ফোনে কে? জবাব দিলেন, ‘‘এলাকায় নেই। তাই ফোনে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে।’’

সময় কাটছে কী ভাবে? বিরক্তির সুরে আরাবুল বলেন, ‘‘গান শুনতে খুব ভালবাসি। তবে ফোনে আর শুনতে ভাল লাগে না। ছেলে সাউন্ডসিস্টেম দিয়ে যাবে বলেছিল। এখনও আসেনি।’’ হাকিমুল বলেন, ‘‘ঠিক চলে আসবে।’’ বাবার জন্য টিভির আবদারও করেছিলেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেননি।

আর ক’দিন থাকবেন হাসপাতালে? আরাবুলের জবাব, ‘‘এখনও তো ভাল হলাম না। একটু ভাল হই!’’

এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে এ ভাবে বেড আটকে কী করে রয়েছেন আরাবুল? সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন করে আর খোঁজ নিইনি। সুস্থ হয়ে গেলে নিশ্চয় ছেড়ে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE