Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নার্সের আকাল, ব্যান্ডেজ বাঁধার দায়িত্বেও আয়া

শহরের এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগে একই ছবি। পেটে জটিল অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে শয্যায় রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী যাবতীয় পরিচর্যা করছেন আয়া।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:১০
Share: Save:

বাজি পোড়াতে গিয়ে বছর সাতেকের এক স্কুলপড়ুয়ার পায়ের একাংশ পুড়ে গিয়েছে। তমলুক থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পরে ওই পড়ুয়াকে ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। কিন্তু রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে এবং ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করতে টাকা দিয়ে আয়া রাখতে হচ্ছে পরিজনদের।

শহরের এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগে একই ছবি। পেটে জটিল অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে শয্যায় রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী যাবতীয় পরিচর্যা করছেন আয়া। পরিজনদের জানানো হয়েছে, দু’‌বেলার আয়া রাখতেই হবে। নইলে রোগীর পরিচর্যায় সমস্যা হবে।

রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের প্রশ্ন, পরিচর্যার দায়িত্ব তো নার্সদের। তা হলে আবার আয়া কেন? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যাপ্ত নার্স না-থাকায় কাজ সামলাচ্ছেন আয়ারা।

আয়াদের দিয়ে রোগীর পরিচর্যার করানোর বিষয়টি নিয়ে রোগীর পরিজনদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকা রোগীর কাছে যাওয়ার জন্য চিকিৎসকেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন পরিজনদের। অভিযোগ, আয়ারা কিন্তু অধিকাংশ সময়েই রোগী পরিচর্যার জন্য পরিচ্ছন্নতার বিধিনিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। অথচ সে-দিকে নজর নেই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের। তার উপরে যে-পরিষেবা পাওয়ার কথা বিনা পয়সায়, তার জন্য দিনে প্রায় ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কারণ, সরকারি হাসপাতালেও দু’‌বেলার জন্য টাকা দিয়ে আয়া রাখতে হচ্ছে। অথচ পরিচর্যার দায়িত্ব সরকারি নার্সের।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঙুর হাসপাতালে দু’জন নার্স, এসএসকেএম হাসপাতালে তিন জন নার্স বার্ন ওয়ার্ডের দায়িত্ব সামলান। শল্যচিকিৎসা বিভাগে একই ছবি। কোনও হাসপাতালে দু’জন, আবার কোথাও তিন জন নার্স পুরো ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন। জেলার হাসপাতালের অবস্থা আরও শোচনীয়। কোনও কোনও হাসপাতালে ২০ শয্যার শল্যচিকিৎসা বিভাগে মাত্র এক জন নার্স দায়িত্ব সামলাচ্ছেন! দফতরের এক কর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী বার্ন বা সার্জারির মতো বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগী-পিছু এক জন নার্স থাকা দরকার। কিন্তু দেখা যায়, পুরো ওয়ার্ডের দায়িত্ব এক জনের ঘাড়ে। তাই নার্সের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আয়াদের। রোগীকে ওষুধ দেওয়া কিংবা ব্যান্ডেজ বাঁধার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে।

অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পরিচর্যা বা পুড়ে যাওয়া রোগীর দেখভালের দায়িত্ব যাঁদের উপরে, তাঁদের প্রশিক্ষণ কতটা? ‘‘তাঁরা দেখতে দেখতে শিখে নিয়েই কাজ সামলাচ্ছেন,’’ বললেন সরকারি হাসপাতালের এক কর্তা। তার ফল কী হচ্ছে? রোগী এবং তাঁদের পরিজনেদের অভিজ্ঞতা, অপ্রশিক্ষিত হাতে ব্যান্ডেজ ঠিকমতো হচ্ছে না। তার জেরে সুস্থ হয়ে উঠতে অতিরিক্ত সময় লাগছে।

সরকারি হাসপাতালে নার্স নিয়োগ নিয়ে সরব হয়েছে নার্সদের একাধিক সংগঠন। রাজ্য জুড়ে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার নার্স-পদ ফাঁকা। স্বাস্থ্য দফতর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, নার্সের ঘাটতি পূরণের জন্য জেলায় আরও ২৭টি নার্সিং কলেজ খোলার প্রস্তুতি চলছে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে তিন হাজার নতুন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও শ’পাঁচেক নার্স নিয়োগ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE