তাঁকে গ্রেফতার করে যথাযথ তদন্ত করতে বলেছে হাইকোর্ট। অথচ, বহাল তবিয়তে সরকারি চাকরি করে যাচ্ছেন তিনি। উল্টে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই চিকিৎসকের কার্যত পাশে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জমা পড়ার পরেও সংশ্লিষ্ট জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বিষয়টি ওই ডাক্তারের ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগের তির পশ্চিম মেদিনীপুরের সোনাহাটি ব্লকে খুকুরদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার অভিজিৎ দত্তের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিণী চাকদহের তরুণী। চাকদহ থানার ওসি জ্যোতির্ময় বসু বলছেন, ‘‘বেশ কয়েক বার ওই চিকিৎসককে ধরতে গিয়েও আমরা ব্যর্থ। কী ভাবে যেন তিনি খবর পেয়ে পালিয়েছেন।’’
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী অভিযুক্ত চিকিৎসক হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের বাসিন্দা। বয়স ৩২। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অভিজিৎবাবুর আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করা দরকার বলে, তাঁর রায়ে মন্তব্য করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি পুলিশের কাছে অধরা। শনিবার তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। খুকুরদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক অনির্বাণ বিজলি বলেন, ‘‘উনি (অভিজিৎ) ছুটি নিয়েছেন। বলেছেন ওঁর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়েই কিছু কাজ আছে।’’ ঘাটাল মহকুমার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ) দুর্গাপদ রাউতের কথায়, ‘‘বিষয়টা অভিজিৎবাবুর ব্যক্তিগত বিষয়। এই নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের প্রশ্নই নেই।’’ তবে পুলিশের দাবি, গত জানুয়ারিতে তরুণীর বাড়িতে দল বেঁধে চড়াও হয়ে ওই ডাক্তার তাঁকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছিলেন বলে অভিযোগ।
তবে অভিযোগকারিণী তরুণী ২০১৬-র ১৭ জানুয়ারি প্রথম বার ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তখন সেটা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ ছিল। তরুণীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন সম্পর্ক এবং শারীরিক মেলামেশার পরে অভিজিতের পরিবার বিয়ের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, ২৫ ভরি সোনা দাবি করেছিল। এর পরে গত বছর এপ্রিলে অভিজিতের কাকা মেয়েটির বাড়ি এসে তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ বছর জানুয়ারিতে অভিজিৎ, তাঁর ভাই ও আরও কয়েক জন মিলে মারধর করে ও সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। হাইকোর্টের উকিল জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগে এত দিনেও কারও ধরা না-পড়াটা দুর্ভাগ্যজনক। মেয়েটির জন্যও এটা বিপজ্জনক।’’
আর পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্তাদের দোরে দোরে ঘুরে ক্লান্ত তরুণীর প্রশ্ন, ‘‘ও হুমকি দিয়েছে— যখন ইচ্ছে এসে আমাকে যা খুশি করবে। জানি না, এর পরেও পুলিশের কত দিন লাগবে ওকে ধরতে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy