Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
State News

কল্যাণীর ডিন নকল করে ডি লিট! অভিযোগ রাজভবনে

সুজয়বাবুর দাবি, তিনি গবেষণাপত্র একাধিক বার খুঁটিয়ে পড়েছেন। তার একাধিক অংশ বিভিন্ন বই থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। কিন্তু মূল লেখার উল্লেখ না করে তপনবাবু নাকি প্রতিটি অংশই নিজের বলে দাবি করেছেন।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে তপনকুমার বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে তপনকুমার বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ১৬:৫৮
Share: Save:

ছাত্রছাত্রীদের লেখা টুকেই ডি লিট প্রাপ্তি! খালি ছাত্রছাত্রী নয়। সহকর্মীর বই থেকেও নাকি হুবহু টুকে দিয়েছেন ‘কীর্তিমান’ এই অধ্যাপক। এমনটাই অভিযোগ।

আচার্য, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ও কমার্স বিভাগের ডিন তপনকুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে। অভিযোগ জানিয়েছেন অধ্যাপক সুজয়কুমার মণ্ডল। তাঁর বই থেকেই নাকি নকল করা হয়েছে।

চলতি মাসের ২২ তারিখ রাজ্যপালকে জানানো চিঠিতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজয়বাবু অভিযোগ জানিয়েছেন, তপনবাবুকে ২০১২ সালে ডি লিট দেওয়া হয়েছিল ‘নদিয়া জেলার লোকসংস্কৃতির পরিচয় এবং সমাজ বিকাশে তার ভূমিকা’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের জন্য।

আরও পড়ুন
বীরভূমে বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার, বড় নাশকতার ছক পশ্চিমবঙ্গে?

সুজয়বাবুর দাবি, তিনি সেই গবেষণাপত্র একাধিক বার খুঁটিয়ে পড়েছেন। তার একাধিক অংশ বিভিন্ন বই থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। কিন্তু মূল লেখার উল্লেখ না করে তপনবাবু নাকি প্রতিটি অংশই নিজের বলে দাবি করেছেন। চিঠিতে সুজয়বাবু লিখেছেন, “তপনকুমার বিশ্বাসের গবেষণাপত্রের ৬৪০ থেকে ৬৪৮ পৃষ্ঠার সব ক’টি অনুচ্ছেদই ২০০৬ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েরই স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্রী শিউলি ভৌমিকের জমা দেওয়া ডিসার্টেসন পেপার নদিয়া জেলার পর্যটনের সঙ্গে লোক সংস্কৃতির সম্পর্ক থেকে নকল করা।” শুধু তাই নয়, সুব্রত বিশ্বাস নামে আরও এক ছাত্রের ডিসার্টেসন পেপারের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখান থেকেও নকল করা হয়েছে গবেষণাপত্রে। রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে অভিযোগকারী সুজয়বাবু জানিয়েছেন, তাঁর সম্পাদিত নদিয়ার ইতিবৃত্ত বই থেকেও হুবহু টোকা হয়েছে গবেষণাপত্রে। আরও একাধিক বইয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখান থেকে নাকি এ ভাবেই নিজের গবেষণাপত্রে নকল করেছেন তপনবাবু। অভিযোগপত্রের সঙ্গে সুজয়বাবু সমস্ত নথি জমাও দিয়েছেন। রাজ্যপালের পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছেও অভিযোগপত্র পৌঁছেছে।

রাজ্যপালকে পাঠানো অভিযোগপত্র। —নিজস্ব চিত্র।

যাঁর বিরুদ্ধে এই নকলের অভিযোগ, সেই তপনকুমার বিশ্বাসের সঙ্গে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি সরাসরি কোনও উত্তর না দিয়ে বলেন, “যা করার বিশ্ববিদ্যালয় করবে। তারাই ঠিক করবে, কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা।” তাঁর দাবি তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু কী ভাবে? তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি।

আরও পড়ুন
আইসিইউ থেকে মুক্ত দিলচাঁদ, ছাড়া পাচ্ছেন শীঘ্রই

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার কাছে এই বিষয়ে কোনও তথ্য নেই।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষকের অভিযোগ, তপনবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা এবং বাণিজ্য বিভাগের গবেষণা সংক্রান্ত সমিতির সভাপতি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কোনও তদন্ত এ ক্ষেত্রে প্রহসন। ওই গবেষক ছাত্রদের এক জন বলেন, “এর আগে গত মার্চে এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। কিন্তু, এখনও অভ্যন্তরীণ তদন্তের কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি।” কারণটাও তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘‘গোটা বিশ্ববিদ্যালয় জানে, উনি উপাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।’’

নদিয়ার মদনপুরের বাসিন্দা তপনকুমার বিশ্বাস কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর হন। প্রথমে তিনি আশুতোষ কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। পরে ২০০০ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। তাঁর সেই সময়ের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদেরই একাংশ। অভিযোগ, সেই সময়েও তাঁর নিয়োগ পুরোপুরি নিয়ম মেনে হয়নি।

তপনবাবুর সহকর্মীদের এক জনের দাবি, “অনেক দিন আগেই আমরা আঁচ করেছিলাম। কারণ ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ডিসার্টেসন পেপারের বিষয় ঠিক করে দিতেন। প্রত্যেককেই নদিয়া জেলার কোনও একটা ব্লক ধরে কাজ করতে বলা হত। এ ভাবেই ২০১১ সালে ডি লিটের জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করার আগেই ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে গবেষণার কাজটা সেরে রেখেছিলেন। কারণ তাঁর নিজের গবেষণার বিষয়ও নদিয়া জেলা।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশের দাবি, উপাচার্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই তপনবাবু ২০১৭ সালে যেমন ডিন পদে নিযুক্ত হন, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE