চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে রোগী ও পরিজনদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে যন্ত্র মিলেছে ঠিকই। কিন্তু ক্যানসার রোগীদের ভোগান্তি বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ!
উন্নত রেডিয়োথেরাপি পরিষেবা দিতে রাজ্যের চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর যন্ত্র বসানো হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনায় ফাঁকফোকর থেকে যাওয়ায় সেগুলো কবে চালু হবে, কর্তৃপক্ষও বলতে পারছেন না। প্রায় ১০০ কোটি টাকার যন্ত্র কেনার আগে কর্মপরিকল্পনা যাচাই হয়নি কেন? সদুত্তর নেই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।
ক্যানসারে রেডিয়োথেরাপি চলে দু’টি পদ্ধতিতে। ‘কোবাল্ট’ আর ‘লিনিয়ার’। লিনিয়ারের নতুন যন্ত্র কেনা হলেও চালু হয়নি। আবার কোবাল্ট রেডিয়োথেরাপির মতো পুরনো পরিষেবাও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। রেডিয়োথেরাপির জন্য এখন ভরসা মূলত চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল। একটি কোবাল্ট এবং একটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানকার চিকিৎসক-কর্মীদের। কেননা রোগী প্রচুর, কিন্তু যন্ত্র মাত্র দু’টি। দেড় মাসের আগে থেরাপির তারিখ দেওয়া যাচ্ছে না অনেক রোগীকে।
স্বাস্থ্য ভবনের খবর, সূক্ষ্ম রেডিয়োথেরাপির জন্য লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর না-থাকায় ফুসফুস, গলা, মস্তিষ্কের ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছিল। তাই আরজি কর ও এনআরএসে দু’টি করে এবং এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যালে একটি করে এই যন্ত্র বরাদ্দ হয়েছে। রেডিয়োথেরাপি অঙ্কোলজিস্টদের বক্তব্য, লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর পরিষেবার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। চাই রেডিয়ো অঙ্কোলজিস্ট, মেডিফিজিক্সের বিশেষজ্ঞ, রেডিয়ো টেকনিশিয়ান। পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা হলে ‘ভাবা’-র প্রতিনিধিরা তা পর্যবেক্ষণ করবেন। পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের অনুমতি মিললে তবে সেই পরিষেবা চালু করা যাবে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সরকারি হাসপাতালে বেতন তুলনামূলক কম হওয়ায় মেডিফিজিক্স বিশেষজ্ঞ মেলে না। কোবাল্ট মেশিন বসানোর সময়ে এই সমস্যা হয়েছিল। এ বারেও হচ্ছে। এসএসকেএমের এক চিকিৎসক জানান, কখনও টেকনিশিয়ান অমিল তো কখনও মেডিফিজিক্স বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাচ্ছে না। মার খাচ্ছে পরিষেবা।
ক্যানসার চিকিৎসকেরা জানান, হাড় বা চামড়ার অনেকটা জায়গা জুড়ে রোগ ছড়ালে তবেই কোবাল্ট রেডিয়োথেরাপি চলে। নির্দিষ্ট জায়গায় সূক্ষ্ম থেরাপির জন্য লাগে লিনিয়র অ্যাক্সিলেরেটর। রেডিয়োথেরাপি ব্যবহার করতে হয় ভারতের পরমাণু শক্তি ব্যবহারের নিয়মবিধি মেনে। তাই কোবাল্ট মেশিন থাকলেও সব ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা যায় না। তার উপরে কোবাল্ট মেশিনে কয়েক বছর অন্তর রশ্মি সংযোজন করতে হয়। তাতে অনেকটা সময় লাগে। সেই কাজেও নজরদারি ও প্রস্তুতিতে ত্রুটি থাকায় ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।
‘‘পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যেই আরজি করে কোবাল্ট পরিষেবা স্বাভাবিক হবে,’’ আশ্বাস দিচ্ছেন সেখানকার রেডিয়োথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। মেডিক্যাল কলেজের রেডিয়োলজি বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, অনেক ক্ষেত্রে অন্য হাসপাতালের উপরে নির্ভর করতে হত। এখন মেশিন বসেছে।
কিন্তু পরনির্ভরতা কাটিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলি কবে রোগীদের পাশে দাঁড়াতে পারবে, তা অনিশ্চিত। যদিও ওই সব হাসপাতালের দাবি, সমস্যা মিটে যাবে। উন্নত পরিষেবা মিলবে মাস তিনেকের মধ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy