Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
State News

সৌজন্য সেরে রইলেন দূরেই

সকালে শুরুটা হল গলায় উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানিয়ে। কিন্তু বাকি দিনভর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দূরত্বই থাকল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৫:৫৯
Share: Save:

সকালে শুরুটা হল গলায় উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানিয়ে। কিন্তু বাকি দিনভর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দূরত্বই থাকল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিশ্বভারতীর ‘বাংলাদেশ ভবনে’ দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠকের পরে তিনিও আলোচনায় যোগ দিতে পারেন। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় কোনও এক সময়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু শুক্রবার কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তা হয়নি। নির্দিষ্ট সূচি ধরেই হল শুধু মোদী-হাসিনা বৈঠক। এই আবহে সৌজন্য ও কর্তব্যের বাইরে পা ফেললেন না মোদী বা মমতা, কেউই। দু’জনের রসায়নে সর্বক্ষণ বোঝা গেল আড়়ষ্টতার ছাপ।

সদ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধে’র অভিযোগ তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফলপ্রকাশের পরে মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ওই আচরণের। আবার তিন দিন আগে মমতা গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর শপথে বিজেপি-বিরোধী শক্তির সমাহারের মঞ্চে। এর পরে মোদী-মমতার সমীকরণ সহজ না হওয়াই রাজনীতির অঙ্কে হয়তো সরল ছিল। কিন্তু কূটনীতির অঙ্কে বেড়়া ভাঙা হতে পারে বলে ধারণা তৈরি হয়েছিল। তা না মেলায় দিনের শেষে ‘রাজনীতি’টাই থেকে গেল।

দিল্লি থেকে এ দিন সকালে পানাগড়ের এয়ারবেসে এসে নামে প্রধানমন্ত্রীর বিমান। প্রোটোকল মেনে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। পানাগড়় থেকে বায়ুসেনার কপ্টার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে শান্তিনিকেতনের মেলার মাঠ ছুঁতেই উত্তরীয় পরিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী। সৌজন্য বিনিময় ছাড়়া দু’জনের অবশ্য বিশেষ কথা হয়নি। সূত্রের খবর, হেলিপ্যাডে এক ঝাঁক বিজেপি নেতাকে হাজির থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ বিব্রত বোধ করেছিলেন মমতা। দাঁড়িয়েছিলেন অনেকটা তফাতে। বিশ্বভারতীতে পৌঁছে মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুরে দেখেন রবীন্দ্র ভবন ও উত্তরায়ণ। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায়, হাত ধরে রাজ্যপালকে ঠিক জায়গায় দাঁড়় করিয়ে দিচ্ছেন!

‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধনের পরে মোদী এক বার মমতাকে ডাকেন সামনে আসার জন্য। দৃশ্যতই আড়়ষ্ট মুখ্যমন্ত্রী দু’পা এগিয়ে কয়েক মুহূর্ত প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েই হাসিনার ডাকে সাড়়া দিয়ে চলে যান তাঁর পাশে। দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক শুরু হতেই মমতা চলে যান ‘রাঙাবিতানে’। বিকেলে কলকাতার পথ ধরেন মুখ্যমন্ত্রী, জানিয়ে যান রাজভবনে হাসিনার সম্মানে রাজ্যপালের নৈশভোজে যাবেন।

মমতা-মোদীর দূরত্ব থাকলেও সকালের ছবি দেখিয়েই বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কর্নাটকে বিজেপি-বিরোধিতার মঞ্চে যাওয়ার পরেই আবার মোদীকে উত্তরীয় পরাতে চলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনটায় তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ?’’ একই প্রশ্ন কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীরও। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এমন কটাক্ষে আমল দিচ্ছেন না। তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এসেছেন। সৌজন্যের একটা ব্যাপার আছে। আমি তো শেখ হাসিনাকেও স্বাগত জানিয়েছি!’’

রাজ্য বিজেপির নেতার ঝাঁক অবশ্য মোদী-সঙ্গের সুযোগ হাতছাড়়া করতে চাননি। তাঁদের কেউ কেউ দাবি করছেন, হেলিপ্যাডে মোদীকে বিদায় জানাতে গিয়ে তাঁর কানে পঞ্চায়েতে ‘প্রহসনে’র প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। তবে কে কার কানে কী তুলেছেন, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE