Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মদের ঠেক রুখতে প্রতিবাদ, বৃদ্ধের গায়ে আগুন পাণ্ডুয়ায়

রবিবার সকালে পাণ্ডুয়ার সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর গ্রামের তালপুকুর মাঠ থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দুর্গা মুর্মু নামে বছর ষাটেকের ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করেন পড়শিরা। প্রথমে তাঁকে পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুশান্ত সরকার
পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৪:২৭
Share: Save:

সকালে ফাঁকা মাঠের মধ্যে মদের আসর বসিয়েছিল দুই ভাই। দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন এক বৃদ্ধ। এই ছিল তাঁর ‘অপরাধ’। তার জেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে বৃদ্ধকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে।

রবিবার সকালে পাণ্ডুয়ার সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর গ্রামের তালপুকুর মাঠ থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দুর্গা মুর্মু নামে বছর ষাটেকের ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করেন পড়শিরা। প্রথমে তাঁকে পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, দুর্গাবাবুর পেট, পা, হাতের কিছুটা অংশ এবং চুলের একাংশ পুড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে।

বেলা ১১টা নাগাদ তিন্না সেতুর কাছ থেকে পুলিশ অভিযুক্ত পলাশ দুর্লভকে গ্রেফতার করে। তবে, তার ভাই, আর এক অভিযুক্ত অলোককে পুলিশ ধরতে পারেনি। দু’জনের বাড়ি পাশের পাঁচগড়া গ্রামে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অন্য অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। ওরা
বাইরে থেকে মদ এনে খাচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের জার এবং পলাশদের একটি সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, এ দিন বাড়ির জন্য কেরোসিন তেল নিয়ে ফেরার আগে দুই ভাই মদ খেতে বসে। তার পরেই ওই কাণ্ড।

দুর্গাবাবুর বড় ছেলে নির্মল বলেন, ‘‘পাড়া-পড়শিরা সময় মতো না-এলে বাবাকে বাঁচানো যেত না। বাবা চিরকালের প্রতিবাদী। কোনও অন্যায় সহ্য করতে পারেন না।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পলাশ-অলোক প্রায়ই ওই মাঠে মদের আসর বসায়। বেশির ভাগ দিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে রাতে আসর বসায় তারা। কখনও-সখনও সকালে। এ দিন ভোরে ধান ঝাড়ার কাজ করতে বেরিয়ে যান দুর্গাবাবু। সাড়ে ৯টা নাগাদ ফিরছিলেন। পলাশদের মদ খেতে দেখে তিনি বারণ করতেই বচসা শুরু হয়। এর পরেই তাঁর গায়ে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকেন বৃদ্ধ। সেই ফাঁকে পলাশরা পালায়।

গ্রামবাসীদের কয়েক জনের অভিযোগ, প্রায়ই ওই মাঠে মদের আসর বসে। পুলিশকে বলেও লাভ হয়নি। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই গ্রামে কোনও মদের ঠেক নেই। রাতে নিয়মিত টহল চলে। সেই সময় কাউকে প্রকাশ্যে মদ খেতে দেখা যায় না।

এ দিনের ঘটনার পরে গ্রামবাসীদের কেউ কেউ আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁদের মধ্যে বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, ‘‘যা দিনকাল, তাতে অন্যায়ের প্রতিবাদও করা যাবে না। তা হলে দুর্গাবাবুর মতো দশা হতে পারে।’’ ছেলেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি পলাশ-অলোকদের বাবা ধনঞ্জয় দুর্লভ। তাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলেরা কোনও অন্যায় করেনি। এর বেশি কিছু বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE