Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
State News

এটা কি মোদীর রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ?

শুরু করলেন আচার্য হিসেবে। দু’লাইন বাংলা বললেন, অব্যবস্থার জন্য আচার্য হিসেবেই ক্ষমাপ্রার্থী হলেন। কিন্তু শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে! কেন্দ্রের একের পর এক প্রকল্প উল্লেখ করে ছাত্র-ছাত্রীদের যে ভাবে সে সব রূপায়ণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন, তাতে অনেকেরই প্রশ্ন— এটা কি নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ?

পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৪:২৪
Share: Save:

শুরু করলেন আচার্য হিসেবে। দু’লাইন বাংলা বললেন, অব্যবস্থার জন্য আচার্য হিসেবেই ক্ষমাপ্রার্থী হলেন। কিন্তু শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে! কেন্দ্রের একের পর এক প্রকল্প উল্লেখ করে ছাত্র-ছাত্রীদের যে ভাবে সে সব রূপায়ণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন, তাতে অনেকেরই প্রশ্ন— এটা কি নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ?

কম গেলেন না আচার্যের শিষ্যেরাও! বেদগানের সময়ে সিটি পড়়ল। অতিথিরা আসার আগে হট্টগোল থেকে হাতাহাতি হল। আচার্যের রাজনৈতিক ভাষণের সঙ্গে সঙ্গত করেই যেন মুহুর্মুহু স্লোগান উঠল সংবর্ধিত হতে আসা পড়ুয়াদের ভিড় থেকে। ‘মোদী মোদী’ চিৎকার হল! শেষ দিকে দু-এক টুকরো ‘ভারত মাতা কি জয়’। এমনকি, ‘জয় শ্রীরাম’ও!

শতবর্ষের দুয়ারে দাঁড়়ানো বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে নানা বেনজির ঘটনা ঘটল শুক্রবার। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের এমন চেহারা দেখে লজ্জায় মাথা হেঁট বহু প্রবীণ শিক্ষক এবং আশ্রমিকের।

বক্তৃতার মাঝপথেই আচার্য মোদীর সম্বোধন ফিরে গিয়েছে ‘স্থানীয়োঁ, ভাইয়োঁ অউর বহেনোঁ’র উদ্দেশে! ডিজিটাল ইন্ডিয়া, উজালা যোজনা, গোবর্ধন যোজনা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন— সবই এনে ফেলেছেন সমাবর্তনে! বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা গ্রামহিতে যে কাজ করেন, তার সঙ্গে নিজের সরকারকে জুড়ে মোদী এমনও বলেছেন, ‘‘২০২১ সালের মধ্যে ১০০টা গ্রাম বেছে নিয়ে কাজ করুন। লোকহিতে কেন্দ্রের অনেক প্রকল্প চলছে। সে সবের সুযোগ আপনারা নিতে পারেন।’’ বিজেপি সাংসদদের গ্রাম দত্তকের কর্মসূচির সঙ্গে বিশ্বভারতীর কাজের ফারাক এক বক্তৃতায় মুছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী!

অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার মূলে অবশ্য অব্যবস্থা। মোদী এবং শেখ হাসিনা, দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিরল সমাবর্তনে সকাল ৮টা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ভিতরে ঢোকানোর বন্দোবস্ত হয়েছিল। ভ্যাপসা গরমে অকুলান জায়গায় জল ছাড়়া কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে অসুস্থ হয়েছেন কয়েক জন, ধৈর্য হারিয়েছেন অন্যেরা। মোদীও বক্তৃতার শুরুতে বলেছেন, ‘‘আচার্য হিসেবে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসার সময়ে রাস্তায় আমার নজর কাড়়ার চেষ্টা করছিলেন কিছু ছাত্র-ছাত্রী। বুঝলাম, ওঁদের খাওয়ার জল নেই। যে সব অসুবিধা ছাত্র-ছাত্রীদের হয়েছে, আচার্য হিসেবে তার সব দায়িত্ব আমার।’’ পিছনে বসে উপাচার্য সবুজকলি সেন তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে।

ক্ষমা চাওয়ার ছলে আচার্য যে তাঁদেরই তিরস্কার করেছেন, তা বুঝে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও দুঃখপ্রকাশ করেন। এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বলা হয়েছিল ৬ হাজার জলের পাউচের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু ছিলেন অন্তত ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক।’’ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার খাতিরেই অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ছিল জলের বোতল। তাই পাউচ। কিন্তু পাঁচ বছরের জমে থাকা সমাবর্তন এক বারে হলে ভিড়ের চাপ কী হতে পারে, তার কোনও আন্দাজই কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের ছিল না বলে মনে করছেন অনেকে। কলাভবনের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘এই গরমে, জল না পেয়ে অত ক্ষণ থাকতে হয়েছে। ছেলেমেয়েরা মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।’’

মোদী অবশ্য মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজাখস্তানে রবীন্দ্র মূর্তি উদ্বোধন, আফগানিস্তানে গিয়ে ‘কাবুলিওয়ালা’ মনে পড়়ার কথা বলেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৌজন্যে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গুজরাতের যোগ বর্ণনা করেছেন। আমেরিকায় কৃষিবিদ্যা পড়়তে যাওয়া কবিপুত্রকে ‘জামাই’ বলে গুলিয়েছেন। আর নব্য স্নাতকদের নতুন ভারত নির্মাণে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আপনারা এক কদম এগোলে সরকার চার কদম এগিয়ে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE