Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষিকা-নির্যাতনে কাঠগড়ায় প্রধান

বর্ণালীদেবী উপাচার্যকে লিখেছেন, পরিস্থিতি না-বদলালে নিষ্কৃতি হিসেবে মৃত্যুকেই বেছে নিতে চান তিনি। বুধবার তাঁর বাবা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চান। উপাচার্য ব্যস্ত থাকায় তিনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করেন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:৪৭
Share: Save:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের উপরে র‌্যাগিং বা নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে প্রায়শই। সেখানে মূলত পড়ুয়ারাই অভিযুক্ত। এ বার টানা মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুললেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের শিক্ষিকা বর্ণালী রায়। এবং তাঁর অভিযোগ খোদ বিভাগীয় প্রধান পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।

বর্ণালীদেবী জানান, লাগাতার মানসিক নির্যাতন সইতে না-পেরে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের বড়ি খেয়েছিলেন তিনি। দক্ষিণ শহরতলির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। পুরো বিষয়টি তিনি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী এবং ডিন দেবাশিস মণ্ডলকে। অভিযোগ দায়ের করেছেন সিঁথি থানাতেও। বর্ণালীদেবী উপাচার্যকে লিখেছেন, পরিস্থিতি না-বদলালে নিষ্কৃতি হিসেবে মৃত্যুকেই বেছে নিতে চান তিনি। বুধবার তাঁর বাবা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চান। উপাচার্য ব্যস্ত থাকায় তিনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে
দেখা করেন।

বর্ণালীদেবী জানান, তাঁর স্বামী অভিজিৎ রায় রবীন্দ্রভারতীতে নৃত্য বিভাগে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৪ সালের মার্চে ক্যানসারে মৃত্যু হয় তাঁরা। ওই বছরের জুনে বর্ণালীদেবী আংশিক সময়ের শিক্ষক-পদে যোগ দেন। তিনি ওই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী, গবেষকও। তাঁর অভিযোগ, চাকরির শুরু থেকেই পুষ্পিতাদেবী তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা করতে থাকেন। ফাইন আর্টস বিভাগের ডিন দেবাশিস মণ্ডলের অনুরোধে সম্প্রতি বসন্তোৎসবে যোগ দেওয়ায় তাঁকে চূড়ান্ত অপমান করেন পুষ্পিতাদেবীর ঘনিষ্ঠেরা। গত সপ্তাহে বিভাগীয় প্রধান এবং তাঁর সঙ্গীরা বৈঠক ডেকে তাঁকে হেনস্থা করেন। ‘‘আমার চরিত্র নিয়ে নোংরা কথা বলেন ওঁরা। আমি কী ভাবে চাকরি পেলাম, তা নিয়েও কটূক্তি করেন,’’ হাসপাতালে শুয়ে বললেন বর্ণালীদেবী।

পুষ্পিতাদেবী অবশ্য জানাচ্ছেন, বসন্তোৎসবে বর্ণালীদেবীর যোগদান নিয়ে বিভাগের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই বিভাগের সব শিক্ষককে নিয়ে তিনি তাঁকে বুঝিয়েছিলেন। ‘‘ওঁর সঙ্গে সাধারণ কথাবার্তা হয়। বসন্তোৎসবের সময়ে আমি ছুটিতে থাকায় অন্য শিক্ষিকা দায়িত্বে ছিলেন। তখন কী হয়েছে, বলতে পারব না,’’ মন্তব্য বিভাগীয় প্রধানের। বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্ণালীদেবীকে নানা ভাবে অপমান করা হয়েছিল। বহিষ্কারের হুমকিও দেওয়া হয়। ওই শিক্ষিকাকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে জানান পড়ুয়াদের একাংশও। এক ছাত্র এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

‘‘ওঁরা তো শিক্ষামন্ত্রী ও পুলিশকে জানানোর পরে আমার কাছে এসেছেন। আমার কিছু করার নেই। যা করার পুলিশ করবে,’’ বলছেন উপাচার্য সব্যসাচীবাবু। বর্ণালীদেবীর অভিযোগের ব্যাপারে সিঁথি থানা বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে পুলিশি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE