তৃণমূল আর বিজেপি-কে বাদ রেখে বাকিরা জোট গড়লে সামিল হবে কংগ্রেস। মন্তব্য অধীরের। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে ফের জোটের দিকে এগোচ্ছে কংগ্রেস। ইঙ্গিত দিলেন খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বাংলায় গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সব ‘সমমনোভাবাপন্ন দলকে’ সঙ্গে নিয়ে এগোতে কংগ্রেস প্রস্তুত— বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতর বিধান ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মন্তব্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির। তৃণমূলকে এ দিন ‘কংগ্রেসের শত্রু’ আখ্যা দিয়েছেন অধীর।
বিজেপি এবং তৃণমূল, এই দুই দলকে বাদ দিয়ে অন্য সব দলকে এক মঞ্চে আনায় উদ্যোগী হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস। জানিয়েছেন অধীর চৌধুরী। কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সিপিএম-সহ বিভিন্ন বামপন্থী দল তো বটেই, অন্য ছোট দলগুলিকেও যৌথ মঞ্চে সামিল হওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে দেশ জু়ড়ে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস সে প্রয়াসে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কর্নাটকে বিজেপি-কে রুখতে জেডি(এস)-কে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়ার যে ফর্মুলা রাহুল গাঁধীরা গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছিলেন, তাতেই বিজেপি বিরোধী মহাজোটের হাওয়া তীব্র হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পদে এইচ ডি কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রায় সব এনডিএ-বহির্ভূত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এক মঞ্চে হাজির হয়ে গিয়েছেন। সে মঞ্চে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। সেই ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতা তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যে মঞ্চেই মমতা যান না কেন, তিনি তাঁকে শত্রুই মনে করছেন— সোজাসাপটা বললেন অধীর।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়: ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে কোনও স্তরে কংগ্রেসের কোনও জোট হওয়ার কথা রয়েছে বলে আমার জানা নেই।’’ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই এ দিন মমতার সমালোচনায় সরব হয়েছেন অধীর। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূল আমাদের শত্রু। তৃণমূল বাংলায় গণতন্ত্রকে শেষ করে দিচ্ছে। তৃণমূলের নেত্রী এক জন স্বৈরাচারী, এক জন একনায়ক।’’ জাতীয় স্তরে যে রাজনৈতিক সমীকরণই তৈরি হোক, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে আপোসের যে কোনও প্রশ্নই নেই, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধীর এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের যে চারটি লোকসভা আসন এ রাজ্যে রয়েছে, সেগুলোও আমরা এই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েই নিয়েছি। কারও দয়ায়, কারও ভিক্ষায় আমরা রাজনীতি করি না।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সর্বভূক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ বলেও এ দিন আক্রমণ করেছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত-পুরসভায় আর লড়াই নয়? ভাবছে প্রদেশ কংগ্রেস
গোটা দেশেই কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। তাই বিজেপির সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়। আর এ রাজ্যে তৃণমূল ‘শত্রু’। তাই তৃণমূলের হাত ধরার প্রশ্নও ওঠে না। মত অধীরের। কিন্তু এই দুই দলকে বাদ দিয়ে কোনও জোট গড়ে উঠলে, কংগ্রেস তাতে সামিল হবে বলে অধীর জানান। কংগ্রেসের তরফ থেকেও সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তৃণমূল আর বিজেপি-কে বাদ দিলে এ রাজ্যে আর কোন বড় শক্তি পড়ে রইল, যার সঙ্গে কংগ্রেস হাত মেলাতে পারে? পড়ে রইল একমাত্র বামেরা। তা হলে কি ফের বাম-কংগ্রেস সমঝোতা? অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম দলগুলির সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য এ বারও যদি তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কংগ্রেস তা সমর্থন করবে।’’
আরও পড়ুন: জঙ্গলমহলে জমি ফেরাতে ভরসা ‘ভারতী মডেল’?
সমঝোতার উদ্যোগ বামেদের তরফ থেকে নেওয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে কংগ্রেস যে নিজেদের তরফ থেকে জোটের রাস্তা প্রশস্ত করতে চাইছে, তা স্পষ্ট। ওমপ্রকাশ মিশ্র বললেন, ‘‘সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে নিয়ে জোটের পথে এগনোয় আমরা উদ্যোগী হচ্ছি। প্রদেশ কংগ্রেস আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সব দলকেই চিঠি পাঠাচ্ছি, একটা যৌথ মঞ্চে সামিল হওয়ার প্রস্তাব দেব।’’
সিপিএম অবশ্য এখনই সমঝোতার বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। কংগ্রেস চিঠি পাঠাচ্ছে শুনে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘চিঠি আগে আসুক। তার পরেই বলব।’’ কিন্তু চিঠি এলে কি ফের জোটের পথে এগোবে সিপিএম? সুজনের কৌশলী জবাব, ‘‘বিজেপি জনবিরোধী শক্তি। আর তৃণমূল স্বৈরাচারী। এ রাজ্যে বিজেপি-কে জায়গাও করে দিচ্ছে তৃণমূল। এদের বিরুদ্ধে তো লড়তেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy