Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
স্বস্তি নেই তৃণমূলের জয়ীদের মনেও

নেতা খুন, তাড়া করছে আতঙ্ক

তৃণমূল নেত্রী তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্র অবশ্য শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে বলেন, ‘‘এমন ঘটনার পরে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তবে আশঙ্কার কিছু নেই। সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সদস্যেরা উদ্যম নিয়ে উন্নয়নের কাজ করবেন।’’ মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ছেলে বা মেয়েকে চাকরির আশ্বাসও দেন মন্ত্রী।

মারমুখী:  জটলা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন এই যুবক। বিক্ষোভকারী বৃদ্ধার ক্ষোভ থেকে রেহাই পানন

মারমুখী:  জটলা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন এই যুবক। বিক্ষোভকারী বৃদ্ধার ক্ষোভ থেকে রেহাই পানন

ধনেখালি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:০১
Share: Save:

জিতেও স্বস্তি নেই শাসকদলে!

দলীয় নেতা খুনের জেরে ধনেখালি ব্লকের গোপীনাথপুর-২ পঞ্চায়েতে টালমাটাল অবস্থা তৃণমূলের। আর এই ঘটনাকে সামনে রেখে জেলার বহু তৃণমূল নেতাকর্মীই এখন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইতে তাঁদেরও হেনস্থা বা হামলার মুখে পড়তে হয় কিনা, ভেবে কাঁটা!

সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে হুগলিতে বারবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। তার জেরে সংঘর্ষও বাদ যায়নি। ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে শাসকদল। কিন্তু তার পরেই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদের দাবিদারদের নিয়ে নতুন করে মাথাব্যথা শুরু হয় দলের জেলা নেতৃত্বের। একটি পদের জন্য একাধিক দাবিদার ইতিমধ্যেই তদ্বির শুরু করেছেন। এর মধ্যে ধনেখালি-কাণ্ডে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে অনেক জেলা নেতারই। কারণ, বিদায়ী পঞ্চায়েত বোর্ডের মেয়াদ রয়েছে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তার মধ্যে কড়া হাতে মোকাবিলা করা না-হলে পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

মৃত্যুঞ্জয় বেরা

তারকেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী এক তৃণমূল প্রার্থীর কথায়, ‘‘যা দেখছি, তাতে এখানেও যে কী হবে ভাবতে ভয় লাগছে। দলীয় নেতৃত্বকে এ বার অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।’’ কানাইপুর পঞ্চায়েতের এক জয়ী প্রার্থী বলেন, ‘‘ধনেখালির ঘটনা চোখ খুলে দিল। কী যে হবে!’’

ধনেখালি ব্লকের গোপীনাথপুর-২ পঞ্চায়েতে আসনসংখ্যা ৯। তার মধ্যে এ বারের জয়ী সদস্যদের অন্যতম তথা দলের পোড়খাওয়া নেতা মৃত্যুঞ্জয় বেরা খুন হয়েছেন। দলেরই অপর দুই সদস্য নিত্যানন্দ সাঁতরা এবং উজ্জ্বল পাত্র ওই ঘটনায় অভিযুক্ত। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজকর্ম এবং বোর্ড গঠন কী ভাবে হবে, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠছে। বিদায়ী প্রধান তথা এ বারের জয়ী সদস্য শোভা কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘যা ঘটল, ভয় তো লাগবেই। দেখি কী হয়। দল যা বলবে, সে ভাবেই চলব।’’

ক্ষোভের-আগুন: জ্বলছে এক অভিযুক্তের বাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে

গ্রামবাসীদের অনেকেই মনে করছেন, পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে যে কাণ্ড হল, তার জেরে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হতে পারে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, এ বার ওই পঞ্চায়েতে কাদের প্রাধান্য থাকবে, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই মৃত্যুঞ্জয় অনুগামীদের সঙ্গে নিত্যানন্দ অনুগামীদের দড়ি টানাটানি চলছিল। এর জেরে মৃত্যুঞ্জয় খুন হতে পারেন।

তৃণমূল নেত্রী তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্র অবশ্য শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে বলেন, ‘‘এমন ঘটনার পরে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তবে আশঙ্কার কিছু নেই। সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সদস্যেরা উদ্যম নিয়ে উন্নয়নের কাজ করবেন।’’ মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ছেলে বা মেয়েকে চাকরির আশ্বাসও দেন মন্ত্রী।

সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে নেত্রী আশ্বাস দিলেও আশঙ্কা যাচ্ছে না বহু তৃণমূল নেতাকর্মীর। কারণ, পঞ্চায়েতের কাজ মূলত প্রধান-কেন্দ্রিক। আর সেই পদের দাবি নিয়ে নানা মাপের দলীয় নেতারা মাঠে নেমে পড়েছেন। পান্ডুয়া থেকে কোন্নগর, আরামবাগ থেকে খানাকুল— সর্বত্রই ছবিটা একই রকম।

ভোটের ফল প্রকাশের পরই জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদেরই পদ দেওয়ার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যেই যে ভাবে হাত-পা ভেঙে, কুপিয়ে ধনেখালির ওই পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান মৃত্যুঞ্জয়বাবুকে খুন করা হল, তাতে এমন আরও ঘটনার সাক্ষী হতে হবে কিনা, এ প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE