নজর: ল্যাপটপের সামনে গৌতম। ইনসেটে, তাঁর অ্যাপ। নিজস্ব চিত্র
তিন মাসেই অনেকটা পাল্টে গিয়েছে ছবিটা। রোদ-বৃষ্টিতে কচুবেড়িয়া লঞ্চঘাটে আর ভেসেলের জন্য অপেক্ষা কে করেন! অ্যাপ আছে না! ‘গঙ্গাসাগর ভেসেল টাইম’।
ভেসেল ধরতে বছরের পর বছর সাগরদ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হত লঞ্চঘাটে। কিন্তু এখন হিসেব বলছে, তিন মাস ধরে ব্লকের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ওই অ্যাপ ব্যবহার করছেন। রোজ গড়ে ৩০ জন করে অ্যাপটি ‘ডাউনলোড’ করছেন। ছোট ব্যবসায়ী বা আনাজ বিক্রেতাদেরও আর সময় নষ্ট হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই অ্যাপটির ‘রেটিং’ পৌঁছেছে ৪.৮-এ। স্বপ্ন সফল হয়েছে সূর্যবৃন্দা গ্রামের গৌতম ঘোড়াইয়ের। কলেজের দরজা না-পেরনো তিনিই তো ‘অ্যাপ’টির স্রষ্টা (ডেভেলপার ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর)!
‘‘মাঝেমধ্যেই কাকদ্বীপ যেতে হয়। লঞ্চঘাটে এক দিন এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে চিন্তাটা মাথায় এল। পরিবহণ দফতর ভেসেলের যে সময়সূচি টাঙায়, সেটা যদি মোবাইলে মেলে, তা হলে অনেকের দুর্ভোগ মেটে। সেই থেকেই আমার অ্যাপ-ভাবনার শুরু।’’—বলেন গৌতম।
কপিলানন্দ বিদ্যাভবন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন গৌতম। কিন্তু কী নিয়ে পড়াশোনা করবেন, ঠিক করে উঠতে পারেননি গৌতম। ফলে, কলেজের পাঠ আর নেওয়া হয়নি। মোবাইল নিয়ে খুটখাট করেন সর্বক্ষণ। অনলাইনে কম্পিউটারের দু’একটি কোর্স করে টাকা জমিয়ে কিনে ফেলেন ল্যাপটপ। তার পরে গুগল থেকে ‘অ্যাপ ডেভেলপার অ্যাকাউন্ট’ করিয়ে ফেলেন। শুরু করেন অ্যাপ বানানো। প্রথমে একটি খেলার, তার পরে জরুরি পরিষেবার। এরপরেই ভেসেলের সময়সূচি নিয়ে অ্যাপ বানানোর তোড়জোড় শুরু। স্মার্টফোনের ‘প্লে স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করে ওই অ্যাপের মাধ্যমে ভেসেলের সময় জানা যায়। বাড়তি হিসেবে রয়েছে বাস-ট্রেনের সময়সূচিও। মেলে অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজও।
গৌতম জানান, পরিবহণ দফতরের সময়সূচির ছবি তুলে তাঁকে পাঠানোর কাজটি করেন অনলাইন মার্কেটিংয়ের ‘ডেলিভারি বয়’ বিকাশ মণ্ডল বা স্থানীয় ছোট গাড়ির চালক মানিক গুড়িয়ার মতো কয়েক জন। তার পরে সেই তথ্য ‘আপলোড’ করা হয়। গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের কালীবাজার এলাকার কলেজ ছাত্র অঞ্জন মণ্ডল এখন প্রতিদিন ‘অ্যাপ’ দেখে ভেসেল ধরতে বের হন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে কাকদ্বীপ কলেজে যেতে হয়। আগে ঘাটে গিয়ে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হত। এখন সে ঝামেলা মিটেছে। অ্যাপটা সত্যিই কাজের।’’ একই কথা আরও অনেকের।
গৌতম, বিকাশ বা মানিকের এই কাজ এখনও অবাণিজ্যিক। এ থেকে রোজগারের ইচ্ছা এখনই তাঁদের নেই। ‘‘অ্যাপ যে মানুষের কাজে লাগছে, এটাই তৃপ্তি।’’— বলছেন গৌতম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy