বিহারে নীতীশ কুমার-লালুপ্রসাদ যাদবদের মহাজোট জয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর টুইট ছিল, ‘সহিষ্ণুতার জয়। অসহিষ্ণুতার পরাজয়’। অসহিষ্ণুতার বাতাবরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কলমও ধরেছেন তিনি। সংবাদপত্রে ছাপা হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কবিতা দীপাবলির দিন নিজেদের ওয়েবসাইটে তুলে প্রচারের রসদও করেছে তৃণমূল। শাসক দলের এই কর্মকাণ্ড দেখেই পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরা। অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে বিহারবাসীর রায় দেখার পরে এ বার পশ্চিমবঙ্গেও একই প্রশ্নে প্রচার গড়ে তুলতে চায় তারা। বিরোধীদের প্রশ্ন, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে মানায়?
তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার নানা কায়দায় দেশবাসীর মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। গোমাংস খাওয়াকে নিয়ে তারাই অসহিষ্ণুতার পরিবেশ গড়ে তুলেছে। বিদ্বজ্জন বা বিশিষ্ট নাগরিকেরা কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁদেরও আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিহারের জনাদেশ এই অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধেই। এর প্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘যিনি এ সব বলছেন, তিনি সাড়ে চার বছর ধরেই অসহিষ্ণু! যাঁর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করছেন, তিনি না হয় দেড় বছরে এই জায়গায় এসেছেন। সাড়ে চার বছর পরে কোথায় যাবেন কে জানে! বাংলার মানুষ তাঁদের নিজেদের রাজ্যে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করবেন।’’ একই ভাবে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম টুইটারে বার্তা দিয়েছেন, মোদীভাইয়ের মতো দিদিভাইয়ের অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্যই তাঁদের লড়াই জারি থাকবে।
তৃণমূলের প্রতিবাদ নিয়ে একই সুরে প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেসও। দলের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘বিজেপি-সঙ্ঘ ধর্মীয় উন্মাদনা এবং অসহিষ্ণুতা তৈরি করেছে। বিহারের রায় তার বিরুদ্ধে গিয়েছে। আর এ রাজ্যে তো প্রতিদিন রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা চলছে! শাসক দলের নেতৃত্বে গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ চলছে। তার পরে কি সেই দলের নেত্রীর কবিতা লেখা মানায়?’’ শিলিগু়ড়ির মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য সরাসরিই বলছেন, ‘‘কার্টুন ফরোয়ার্ড করায় অম্বিকেশ মহাপাত্রকে কার সরকার গ্রেফতার করেছিল? সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় কারা শিলাদিত্য চৌধুরীকে মাওবাদী বলেছিল? অপ্রিয় কথা বলায় মৌসুমী কয়ালদের সিপিএম নয়তো মাওবাদী কে বলেছিল? তার পরে তিনি সহিষ্ণুতার কথা বলবেন আর রাজ্যবাসীকে শুনতে হবে?’’ গণতান্ত্রিক অধিকার ও প্রতিবাদের কণ্ঠকে রুদ্ধ করার প্রতিবাদে আগামী ১০ ডিসেম্বর কলকাতায় তৃণমূল বাদে সব দলকে ডেকে অবস্থানেও বসতে চলেছেন অম্বিকেশেরা। বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যেরও মন্তব্য, ‘‘অসহিষ্ণুতার পাঠ তো তৃণমূল দিতে পারে! তাদের আবার অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কী!’’
বিরোধীদের কটাক্ষকে আমল না দিয়ে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, সচেতন ভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তির অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মমতা। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতার কথায়, ‘‘বিজেপি-র হারে দেশ রক্ষা পেয়েছে!’’ যার জের টেনে সেলিমের আবার পাল্টা তির্যক মন্তব্য, ‘‘সহিষ্ণুতার প্রতিভূ দিদিভাই পরাজিত হলে বাংলাও রক্ষা পাবে!’’ অসহিষ্ণুতা-তর্ক এখন বঙ্গেও জোরদার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy