Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
State news

কার অনুমতিতে মামলা করা হল হাইকোর্টে? রাজ্য বিজেপিতে তোলপাড় শুরু

আদালতে যাওয়ার আগে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই দলের একাংশের দাবি।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:১৪
Share: Save:

আদালতের রায়ে দিনের শেষে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বিজেপি-তে। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত রথযাত্রা স্থগিত রাখার যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ দিয়েছিল, শুক্রবার তা খারিজ হয়ে গিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু মামলা ঘিরে বিজেপির অভ্যন্তরীণ তোলপাড় তুঙ্গে। অনুমতির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত কে নিল? এই প্রশ্নকে ঘিরেই রাজ্য বিজেপি এখন উত্তপ্ত। আদালতে যাওয়ার আগে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই দলের একাংশের দাবি।

রথযাত্রা তথা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র অনুমতি আটকে রেখেছে রাজ্য প্রশাসন— এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য বিজেপি। জয়প্রকাশ মজুমদারই মূলত মামলার বিষয়টি সামলাচ্ছিলেন। মামলা ঘিরে টানটান উত্তেজনায় দু’দিন কেটে যাওয়ার পরে জয়প্রকাশ মজুমদারের ভূমিকা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই মামলা নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

রথযাত্রার সূচনা হওয়ার কথা ছিল শুক্রবারই। সূচনা উপলক্ষে কোচবিহারে আসার কথা ছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের। আগেভাগেই কোচবিহারে পৌঁছে গিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়রা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ স্থগিতাদেশ জারি করে রথযাত্রার উপরে। এর পর থেকেই বিজেপির অন্দরমহল ক্রমশ গরম হতে শুরু করে বলে খবর।

আরও পড়ুন: বিজেপির রথযাত্রায় স্থগিতাদেশ বাতিল করল ডিভিশন বেঞ্চ, তবে অনুমতি এখনও ঝুলে

বিজেপির একটি অংশ জানাচ্ছে, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই মামলা করে দিয়েছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মামলার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু দিলীপ ঘোষের অনুমতি না নিয়েই যে মামলার পথে এগনো হচ্ছে, তা প্রতাপবাবুও জানতেন না বলে রাজ্য বিজেপির আর এক সাধারণ সম্পাদকের দাবি।

আরও পড়ুন: বাংলায় গণতন্ত্র শেষ, মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগে অমিত বললেন রথযাত্রা হবেই

রথযাত্রার জন্য অনুমতি চেয়ে ২৯ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসেও প্রশাসনের তরফে সে বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য ছিল না। তার জেরেই বিজেপির অন্দরে মামলার বিষয়ে কথা শুরু হয়। রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মত ছিল, আদালতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, প্রশাসনকে রথযাত্রার কথা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, ওইটুকুই যথেষ্ট। প্রশাসন যেমন অনুমতি দেয়নি, তেমন রথযাত্রা করা যাবে না বলেও তো জানায়নি— মামলা-বিরোধীদের ব্যাখ্যা ছিল এই রকম। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের অন্য একটি অংশ বলছিল, লিখিত অনুমতি হাতে না নিয়ে রথযাত্রা শুরু করা কঠিন। একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে প্রশাসন যদি লিখিত ভাবে জানায় যে, রথযাত্রার অনুমতি দেওয়া হল না, তখন আর আদালতে গিয়েও লাভ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর পাল্টা যুক্তিও অবশ্য বিজেপির অন্দরেই উঠে এসেছিল। মামলার বিপক্ষে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বলছিলেন, যদি শেষ মুহূর্তে গিয়ে প্রশাসন জানায় যে, রথযাত্রা করা যাবে না, তা হলে আদালতে বিজেপি সুবিধানজনক অবস্থানে থাকবে। কারণ আদালত তখন প্রশ্ন করবে, রথযাত্রার অনুমতি যে দেওয়া হচ্ছে না, তা আগে কেন জানিয়ে দেওয়া হয়নি? কেন গোটা কর্মসূচির প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে প্রশাসন জানাচ্ছে যে, যাত্রার অনুমতি নেই?

আরও পড়ুন: মোদীর ভারতে রহস্যময় শক্তি আছে ভোটযন্ত্রের, কটাক্ষ রাহুলের

তর্ক-বিতর্ক দলের অন্দরে চলছিল ঠিকই। কিন্তু দিলীপ ঘোষ এক বারও মামলার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেননি বলে বিজেপির একটি অংশ দাবি করছে। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া এক নেতার সবুজ সঙ্কেত নিয়ে জয়প্রকাশরা মামলা করেন বলে বিজেপির ওই অংশ জানাচ্ছে। মামলার জেরে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাওয়ায় জয়প্রকাশদের উপরে দিলীপ ঘোষ বেজায় চটেছেন বলেও খবর। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংহের মতো সাধারণ সম্পাদকরাও মামলার পক্ষে ছিলেন না বলে জানা যাচ্ছে। দলের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ তথা বসিরহাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও এই মামলার বিষয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

শুক্রবার যে রথযাত্রা শুরু হচ্ছে না, তা বৃহস্পতিবার বিকেলেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তাই শুক্রবার সকালে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ কোচবিহার সফর বাতিল করেন। কিন্তু সে খবর রাজ্যে আসার আগেই কোচবিহারের জনসভার উদ্দেশে রওনা হতে শুরু করেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। তাই জনসভা বাতিল করা কঠিন ছিল। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়, শুধুমাত্র জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে নমো নমো করে জনসভাটা সেরে ফেলা হবে। কিন্তু রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বেঁকে বসেন। দু-তিনটে জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন, কিন্তু অমিত শাহ আসতে পারছেন না। এর পরে যদি রাজ্য নেতৃত্বও সভায় হাজির না হন, তা হলে বিষয়টা অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ হবে এবং কর্মীরা অত্যন্ত হতাশ হবেন— দিলীপ শিবিরের যুক্তি এমনই ছিল বলে খবর। অবশেষে দিলীপ ঘোষ এবং রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারের জনসভায় হাজির হন। কিন্তু কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহদের দেখা যায়নি সভামঞ্চে।

দিলীপ ঘোষ নিজে বিষয়টি নিয়ে বাইরে মুখ খোলেননি। মামলা নিয়ে তিনি অখুশি, এমন কোনও মন্তব্যও দিলীপ প্রকাশ্যে করেননি। কিন্তু ঘনিষ্ঠ বৃত্তে দিলীপ শিবির বার বার বলছে— এই মামলার কোনও প্রয়োজন ছিল না। ‘‘প্রশাসনকে না জানিয়ে কর্মসূচিতে যাচ্ছিলাম, এমন তো নয়। চিঠি তো প্রশাসনের ঘরে ফেলে এসেছি অনেক আগেই। এর পরে দেখে নিতাম, অমিত শাহের পথ আটকানোর ক্ষমতা কোন পুলিশের রয়েছে।’’ মন্তব্য রাজ্যস্তরের এক শীর্ষনেতার। তবে আপাতত ঘরোয়া তোলপাড় নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE