Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Physical Distancing

শব্দ-বিতর্ক নয়, রাখা চাই দূরত্ব

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রবিবারের ‘মন কি বাত’-এও সামাজিক দূরত্ব শব্দবন্ধটি নিয়ে খানিক কাটাছেঁড়া চলে।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৪
Share: Save:

নিষ্ঠুর এক দুঃসহ আবহ। যখন অশক্ত, বয়স্ক মা-বাবাকে স্পর্শ করতে বা তাঁদের কাছাকাছি যেতেও ভয় পাচ্ছেন তরুণ ও কিশোর ছেলেমেয়েরা!

নিজের অজান্তে স্নেহ বা ভালবাসার সান্নিধ্যটুকুও ক্রমহ্রাসমান প্রতিরোধ শক্তির প্রবীণ-প্রবীণার পক্ষে হন্তারক হতে পারে। মারাত্মক ছোঁয়াচে নোভেল করোনাভাইরাসের থাবা থেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পরস্পরের থেকে দূরে থাকার এই নিরুপায় পন্থাটুকু এখন আমাদের প্রাত্যহিক লব্জে ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ বা ‘সামাজিক দূরত্ব’ বলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবু এই বিষয়ে কিছু প্রশ্নও উঠছে। ভারতের মতো দেশে নানা ছুতমার্গের রীতির কথা মাথায় রেখেই এই শব্দের অভিঘাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ডাক্তার-সমাজকর্মীদের একাংশ। এ বার তাতে সুর মিলিয়েছে ‘হু’ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের বদলে ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্সিং বা শারীরিক দূরত্ব বলাটাই যুক্তিযুক্ত বলে হু-র সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় সওয়াল করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রবিবারের ‘মন কি বাত’-এও সামাজিক দূরত্ব শব্দবন্ধটি নিয়ে খানিক কাটাছেঁড়া চলে। তিনি বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব মানে মানুষে-মানুষে দূরত্ব নয়! এই সঙ্কটে মোদীও মানুষের মানসিক দূরত্ব ঘোচানোর উপরেই জোর দিয়েছেন। তবু এই প্রথম সামাজিক মাধ্যমের টিপ্পনীতে বেঁচে থাকার পুরনো অভিজ্ঞান পাল্টে যাওয়া নিয়ে রসিকতার সুর। আর দল বেঁধে নয়, বাঁচতে হলে একা বাঁচুন বা ‘ডিভাইডেড উই স্ট্যান্ড’ বলে মিম ঘুরছে ফোনে ফোনে। “কিন্তু বহু মানুষ তো আদতে একা একাই বাঁচছিলেন। সমাজ বা গোষ্ঠীবদ্ধতার ধারণাটা সোশ্যাল মিডিয়ার আঙ্গিকে স্মার্টফোনের ভিতরেই ঢুকে গিয়েছিল প্রায়। এখন সেটা ভেঙে বেরিয়ে, কাছে না-ঘেঁষেও পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার সময়,” বলছেন মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তাই সামাজিক দূরত্ব কথাটি অসম্পূর্ণ এবং অপব্যাখ্যার সম্ভাবনায় ভরপুর বলে মনে করছেন তিনি।

জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক তথা জেলা স্তরে সক্রিয় রাজ্য সরকারের অন্যতম স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত বলছেন, “ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচাতে দূরে থাকার কথাটা তো বলছি সমাজকে বাঁচানোর স্বার্থে। তা হলে সামাজিক দূরত্ব হল কী ভাবে!”

আবার শব্দের ফাঁদে জড়িয়ে পড়াটাও গোলমেলে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যেমন, শারীরিক দূরত্ব বললে সাহচর্যের উপরে নির্ভরশীল তথাকথিত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি সুবিচার করা হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ‘‘এখন প্রশ্নটা শব্দের শুদ্ধতার নয়, বাঁচার। সামাজিক দূরত্ব বলতে কেউ এখন ধর্ম বা জাতের দূরত্ব বুঝলে তাঁর কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন উঠবে,” শব্দ নিয়ে এই স্পর্শকাতরতায় কিছুটা বিরক্ত সাহিত্যিক কুণাল বসু। তিনি বরং বলছেন, “এই সুযোগে সামাজিক দূরত্বের ব্যঞ্জনাটা পাল্টে গেলে সত্যি ক্ষতির কিছু আছে কি?”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE