Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আধার হল না কেন, ক্ষুব্ধ বিচারপতি

আধার কার্ড কেন্দ্রের প্রকল্প। ওই কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক, বলছে কেন্দ্র। তা হলে ওই কার্ড পাওয়ার জন্য কাউকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে কেন, সেই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
Share: Save:

আধার কার্ড কেন্দ্রের প্রকল্প। ওই কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক, বলছে কেন্দ্র। তা হলে ওই কার্ড পাওয়ার জন্য কাউকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে কেন, সেই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। ‘সেরিব্রাল পলসি’ আক্রান্ত এক যুবকের আধার কার্ড না পাওয়া সংক্রান্ত একটি মামলায় বৃহস্পতিবার ওই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের মক্কেল নূপুর মৈত্রের ২৭ বছরের ছেলে সনৎকুমার মৈত্র সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। নূপুরদেবীরা থাকেন বড়িশার কৈলাস ঘোষ রোডে। ওই যুবক সোজা হয়ে বসতে পারেন না। সোজা তাকাতে পারেন না। দু’হাতের আঙুলে তাঁর কোনও সাড় নেই। তিনি বেশির ভাগ সময়েই হুইল চেয়ারে বসে কাটান।

আইনজীবীরা জানান, গত দেড় বছরে নূপুরদেবী তাঁর ছেলেকে নিয়ে আধার কার্ডের জন্য বিভিন্ন শিবিরে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও শিবিরই সনতের আধার কার্ড তৈরি করে দিতে পারেনি। মামলার আবেদনে ওই মহিলা জানিয়েছেন, প্রতিবারই তাঁর ছেলের আধার কার্ডের ছবি তোলার সময়ে হাতের আঙুলের ছাপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে দেখে তিনি শিবিরের সংশ্লিষ্ট কর্মী ও অফিসারদের জানান, ঠিক ভাবে ছবি তোলা যাচ্ছে না। হাতের আঙুলের ছাপও যে নেওয়া যাচ্ছে না, তা-ও তিনি জানান। প্রতিবারই তাঁকে বলা হয়, কর্মী বা অফিসারদের কিছু করার নেই। পরে বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে বলা হয়েছে, সনতের আধার কার্ড তৈরি করা যায়নি।

উপায় না দেখে ওই মহিলা প্রতিবন্ধীদের জন্য রাজ্যের যে দফতর রয়েছে, সেখানে যান। সেখান থেকেও সুরাহা না হওয়ায় কলকাতা পুরসভার কমিশনারের দ্বারস্থ হন তিনি। সেখান থেকেও তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সনৎকে আধার কার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে প্রতিকার চেয়েছেন তিনি।

এ দিন সেই মামলার শুনানি ছিল। আদালতে জয়ন্তনারায়ণবাবুরা জানান, এই সমস্যা কেবল সনতের নয়। রাজ্যের অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত। তাঁরাও দেশের নাগরিক। আধার কার্ড পাওয়ার অধিকার রয়েছে তাঁদেরও। সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধীদের আধার কার্ড তৈরি করার জন্য বিশেষ এক ধরনের কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রয়োজন। দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে সেই সফটওয়্যার রয়েছে। এ রাজ্যে নেই। কেন্দ্রের উচিত অবিলম্বে ওই সফটওয়্যারের ব্যবস্থা করা এবং তা সহজলভ্য করা। যাতে এই রোগে আক্রান্ত যে কোনও মানুষের বাড়ি গিয়ে তাঁর আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়া যায়।

এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকেও। নূপুরদেবীর আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে বিচারপতি বসাক কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে ওই প্রশ্ন তোলেন। কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য
এখনও এ রাজ্যে ওই সফটওয়্যার আসেনি। বিচারপতি তা শুনে নির্দেশ দেন, কবে ওই সফটওয়্যার আপডেট হবে, কবে সনতের বাড়ি গিয়ে আধার কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা হবে, তা আগামী ১৩ নভেম্বর আদালতে জানাতে হবে কেন্দ্রকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE