Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পিংলা বিস্ফোরণ

শিশু শ্রমিকদের মরতে হল কেন, নিরুত্তর সরকার

সাত শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ মিলেছে। আরও দুই শিশু বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে যুঝছে মৃত্যুর সঙ্গে। মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় কাজ করতে আসা শিশুদের মর্মান্তিক পরিণতির ৪৮ ঘণ্টা পরেও রাজ্য কিংবা জেলা প্রশাসন একটি শব্দও উচ্চারণ করল না। কেন দরিদ্র শিশুদের রোজগার করতে ঘর ছাড়তে হচ্ছে, কেনই বা তাদের প্রাণের নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করতে ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন, তা নিয়ে নিরুত্তর রাজ্য সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

সাত শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ মিলেছে। আরও দুই শিশু বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে যুঝছে মৃত্যুর সঙ্গে।

মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় কাজ করতে আসা শিশুদের মর্মান্তিক পরিণতির ৪৮ ঘণ্টা পরেও রাজ্য কিংবা জেলা প্রশাসন একটি শব্দও উচ্চারণ করল না। কেন দরিদ্র শিশুদের রোজগার করতে ঘর ছাড়তে হচ্ছে, কেনই বা তাদের প্রাণের নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করতে ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন, তা নিয়ে নিরুত্তর রাজ্য সরকার।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এ ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।’’ কিন্তু দায়ী কারা? অশোকেন্দুবাবু বলেন, ‘‘শুধু নিচুতলার কর্মীদের দায়ী করে লাভ নেই। উচ্চস্তরের আধিকারিকেরা দায় এড়াতে পারেন না।’’ কারও নাম অবশ্য করেননি তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

দরিদ্র শিশুদের সুরক্ষার জন্য বেতনভুক সরকারি কর্মী বড় কম নেই। প্রতিটি জেলায় রয়েছেন এক জন শিশু সুরক্ষা অফিসার, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম রোখা যাঁদের কাজ। রয়েছেন সমাজকল্যাণ অফিসার। প্রতি ব্লকে আছে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি, যার দায়িত্বে রয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং বিডিও। এ ছাড়াও প্রতি জেলায় রয়েছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি, যারা বিপন্ন শিশুদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে হোমে পাঠাতে পারে। এ ছাড়াও ব্লক স্তরের শ্রম আধিকারিকের শিশু শ্রমিকদের উপর নজরদারি করার কথা। কোনও শিশু যাতে স্কুলের বাইরে না থেকে যায়, দেখার কথা শিক্ষা দফতরেরও। সর্বোপরি শিশুদের বিপন্নতার খবর এলে পুলিশকর্মীদের তাদের উদ্ধার করার কথা।

এত লোক নিয়োগের পরেও কেন প্রাণ যাচ্ছে শিশুদের? দুই জেলাতেই দায়িত্ব এড়ালেন সরকারি কর্তারা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস বলেন, ‘‘খবর এলেই আমরা শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করি।’’ কিন্তু গ্রামবাসী পুলিশের কাছে অভিযোগের পরেও ওই শিশুদের খবর কেন পৌঁছল না সন্দীপবাবুর কানে? প্রশ্ন করতেই ফোন কেটে দিলেন সন্দীপবাবু। শুক্রবারও দিনভর আহত শিশুদের দেখতে সন্দীপবাবু বা শিশু সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত কোনও দফতরের কেউ যাননি। গিয়েছিল কেবল পুলিশ, তাদের জেরা করতে।

মুর্শিদাবাদ জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অর্জুন দত্ত জানান, মার্চ মাসেই সুতি ২ ব্লকে শিশু
সুরক্ষা কমিটি গড়া হয়েছে। তার চেয়ারম্যান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনিকুল ইসলাম, আহ্বায়ক বিডিও দীপঙ্কর রায়। কী বলছেন তাঁরা? আনিকুলের বক্তব্য, ‘‘প্রতি বাড়িতে পাহারা বসানো সম্ভব নয়।’’ আর বিডিও বলছেন, ‘‘সচেতনতা বাড়াতে যা করার করব।’’ একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্জুনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কে কোথায় কাজ করতে যাচ্ছে, তার তথ্য রাখার কথা পঞ্চায়েতের। সেই ব্যবস্থাটা কাজ করছে না।’’

কিন্তু কিশোরদের তো কাজ করতে যাওয়ার কথাই নয়। তাদের বাজি তৈরির মতো কাজে যেতে হচ্ছে কেন? এর উত্তরে শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি থেকে সরকারি কর্মী, সকলে পরিবারের দারিদ্র আর অশিক্ষাকেই দায়ী করছেন। যা শুনে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘দারিদ্র, বৈষম্য তো আছেই। তা সত্ত্বেও যাতে শিশুদের সুরক্ষা বজায় থাকে, সে জন্যই তো সরকারি আধিকারিকরা রয়েছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, এক দিকে সরকার বাজি-বোমা বিতর্ক তুলে দায় এড়াচ্ছে। অন্য দিকে দারিদ্রের দোহাই দিয়ে সরকারি কর্মীরা দায় ঝেড়ে ফেলছেন। শমীকের প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে চললে গরিব শিশুরা প্রতিকার পাবে কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE