প্রতীকী ছবি।
এ বার মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় প্রথম দশটি স্থানে ৫১ জনের মধ্যে সরকারি স্কুলের পড়ুয়া ছিল মাত্র তিন জন। তাতে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ওই সব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শিক্ষা শিবিরের একাংশ। আবার উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় প্রথম দশটি স্থানে থাকা ১৩৭ জনের মধ্যে সরকারি স্কুলের ২৫ জন ছাত্রছাত্রীর ঠাঁই হয়েছে। স্কুল স্তরের সর্বশেষ পরীক্ষায় এই সাফল্যে সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্বভাবতই খুশি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় সরকারি স্কুলগুলির পড়ুয়ার সংখ্যায় এতটা তারতম্য হচ্ছে কেন? ওই সব স্কুলে মাধ্যমিকের পঠনপাঠনে কি কোনও খামতি থাকছে? নাকি গুণগত মান বিচার করে ভর্তির পদ্ধতির জন্যই পরীক্ষার ফলে ফারাক হয়ে যায়?
সরকারি স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার মতে, পঠনপাঠনের খামতি নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের মেধার হেরফেরই ফলাফলে এই তারতম্যের প্রধান কারণ। বেথুন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীর মতে, ‘‘আমাদের স্কুলে মাধ্যমিকে যারা পড়ে, তাদের ভর্তি নেওয়া হয় লটারির ভিত্তিতে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের নেওয়া হয় মাধ্যমিকের ফলাফল দেখে। মাধ্যমিকে ভাল ফল ছাড়া সরকারি স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সব স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের ফলাফলই একটা ছাঁকনির কাজ করে। এবং তারই প্রতিফলন পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে।’’
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের ব্যাখ্যা, মেধাবীরা নিজেদের পছন্দের বিষয় বেছে নিতে পারছেন। যাঁরা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে আগ্রহী, তাঁরা বিজ্ঞান পড়ছেন। আবার যাঁদের আগ্রহ কলা বা বাণিজ্যে, তাঁরা কলা বা বাণিজ্য নিয়ে পড়ছেন। এখন প্রশ্নের ধরন এমন হয়, যাতে বিজ্ঞানের মতো কলা বা বাণিজ্যেও ভাল নম্বর ওঠে।
টাকি হাউস মাল্টিপারপাস গার্লস হাইস্কুল থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ হয়েছেন শ্রেয়াশ্রী সরকার। আবার টাকি হাউস মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ থেকে দশম হয়েছেন ঋতজিৎ সেন। তাঁদের দুই ছাত্রছাত্রী মেধা-তালিকায় প্রথম দশে স্থান পাওয়ায় টাকি হাউস মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজের সদ্য অবসর নেওয়া প্রধান শিক্ষক পরেশ নন্দা উচ্ছ্বসিত। ‘‘বেশির ভাগ সরকারি স্কুলই রয়েছে জেলা শহরে। সেখানে ভাল ভাল কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট টিউশনের সুযোগ পায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। এক দিকে ভাল স্কুল এবং অন্য দিকে ভাল প্রাইভেট টিউশন, দুইয়ে মিলিয়েই ভাল ফল হয়,’’ বলছেন পরেশবাবু।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানাচ্ছেন, অনেক সময় আইসিএসই বা সিবিএসই স্কুল থেকেও ভাল ছাত্রছাত্রীরা সরকারি স্কুলে পড়তে আসে। কারণ, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো আইসিএসই বা সিবিএসই স্কুলের পরিকাঠামোর সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে। বিভিন্ন বোর্ড থেকে আসা ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। ভাল হয় ফল।
তবে শিক্ষক সংগঠনগুলি মনে করে, সরকারি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের মান আরও ভাল হওয়া প্রয়োজন। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ‘ও’ গ্রেড এবং ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে নম্বর পাওয়া ‘এ প্লাস’ গ্রেড পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা ভাল হলেও আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল। এই বিষয়ে সরকারি স্কুলগুলিতে আরও উন্নতির দরকার আছে বলে মনে করে শিক্ষক সংগঠন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy