Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কেন সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি পানাগ়ড়?

মঙ্গলবার পানাগড়ের মাটিতে পা রাখল ভারতীয় বায়ুসেনার নয়া হাতিয়ার সুপার হারকিউলিস। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের মধ্যে এত ঘাঁটি থাকতে দুর্গাপুরের পানাগড়কেই কেন সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি করার জন্য বেছে নিল বায়ুসেনা?

পানাগড়ের আকাশে সুপার হারকিউলিস। ছবি: সুমন বল্লভ।

পানাগড়ের আকাশে সুপার হারকিউলিস। ছবি: সুমন বল্লভ।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
পানাগড় শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ১৮:২৫
Share: Save:

মঙ্গলবার পানাগড়ের মাটিতে পা রাখল ভারতীয় বায়ুসেনার নয়া হাতিয়ার সুপার হারকিউলিস। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের মধ্যে এত ঘাঁটি থাকতে দুর্গাপুরের পানাগড়কেই কেন সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি করার জন্য বেছে নিল বায়ুসেনা?

সেনা সূত্রের ব্যাখ্যা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় চিনা বিপদের কথা মাথায় রেখে নতুন ধরনের যুদ্ধ-কৌশল সাজাচ্ছে সেনা। সেই কারণে তৈরি হচ্ছে ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’। সেনা পরিভাষায়, স্ট্রাইক কোরের অর্থ, আক্রমণাত্মক বাহিনী। সাধারণ সেনা দলের ভূমিকা নিজেদের দেশের জমি শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা। যুদ্ধের সময় অবশ্য পাল্টা আক্রমণে যায় তারা। কিন্তু, স্ট্রাইক কোর সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকে না। তাদের দায়িত্ব শত্রু-দেশে ঢুকে কোনও এলাকা আক্রমণ করে দখল করে নেওয়া। এক সেনাকর্তার কথায়, ‘‘সম্প্রতি মায়ানমারে ঢুকে যে ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে, সেটাই কার্যত স্ট্রাইক কোরের কাজ। মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর পার্বত্য এলাকায় এ ধরনের অভিযান-যুদ্ধে পারদর্শী হবে।’’

সেনা সূত্রের খবর, পানাগড়ের সেনাছাউনিতেই মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের সদর দফতর হবে। সেই বিশেষ সেনাদলকে দ্রুত দুর্গম জায়গায় পৌঁছতে হবে। সুপার হারকিউলিস ১৯ টন ওজন নিয়ে উড়তে সক্ষম। দুর্গম এলাকায় স্বল্প উচ্চতায় উড়তে পারে, এবড়ো-খেবড়ো রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে। তার প্রমাণ হিসেবে ২০১৩ সালের ২০ অগস্ট লাদাখের দৌলত বেগ ওল্ডি এয়ার স্ট্রিপে এবড়ো-খেবড়ো রানওয়েতে সুপার হারকিউলিসের অবতরণ করিয়েছিল বায়ুসেনা। সেনাকর্তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের জওয়ানদের পার্বত্য এলাকায় পৌঁছে দিতেই পানাগড়ে এই বিমানের ঘাঁটি করা হচ্ছে। এ দিন বায়ুসেনার ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান এয়ার মার্শাল এস বি দেও-এর কথাতেও তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘স্পেশ্যাল ফোর্সের বিমান হিসেবেই সুপার হারকিউলিস পরিচিত। পানাগড়ে এর ঘাঁটি হওয়ায় মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের জওয়ানেরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন।’’ প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধের আগে এ রাজ্যের কৃষ্ণনগরে দেশের প্রথম স্ট্রাইক কোর তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে খুলনা, যশোহর, ফরিদপুরের মতো একের পর এক জেলা দখল করেছিল এই কোরের সেনা জওয়ানেরা। বর্তমানে এই কোরের সদর দফতর হরিয়ানার অম্বালায়।

তবে বায়ুসেনা জানিয়েছে, মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের জন্য এই ঘাঁটি তৈরি করা হলেও যুদ্ধ বা অভিযানের পাশাপাশি মালপত্র বইতে সক্ষম সুপার হারকিউলিসকে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হবে। এয়ার মার্শাল দেও বলেন, ‘‘উত্তরাখণ্ড ও নেপালের বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই সুপার হারকিউলিস নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE