প্রতীকী ছবি।
• একটা অস্ত্রোপচার করার জন্য ডাক্তারের নামে বিল হল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ডাক্তার কত পেলেন?
• ইন্ডোরে ভর্তি রোগীকে প্রতিদিন দেখতে আসার জন্য ডাক্তারের ফি নেওয়া হল ১০০০ টাকা। কিন্তু ডাক্তারের জন্য থাকল কত?
• আউটডোরে প্রতিদিন ৪০ জন রোগী দেখছেন ডাক্তার। রোগী-প্রতি বিল হচ্ছে ৮০০ টাকা। কিন্তু ডাক্তারকে কত দিচ্ছে হাসপাতাল?
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে এ বার এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, বিলে স্বচ্ছতা আনার প্রক্রিয়ায় ডাক্তার ও হাসপাতালের খরচকে আলাদা করার এই দিকটিকে পৃথক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
কিছু বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের লাগাতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। তিনি বলছেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে শোষিত হচ্ছেন চিকিৎসকেরাও।’’ অযথা হরেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে, যথেচ্ছ বিল বাড়িয়ে রোগীদের যে-ভাবে শোষণ করা হচ্ছে, তা বন্ধ করতে সরকার ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বার ডাক্তার-শোষণ বন্ধ করার এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে চিকিৎসক শিবির।
বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ডাক্তারদের নামে যে-বিল হয়, তার পুরোটা তাঁরা পান না। তার একটা অংশ হাসপাতাল পায়। কোনও হাসপাতালে এই হার ২৫ শতাংশ, কোথাও ২০ বা ১৫ শতাংশ। রোগী বা তাঁদের পরিবারের লোকেরা অবশ্য সেটা জানতে পারেন না। ডাক্তারদের আপত্তি এই জায়গাতেই।
সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগী জানুন, ডাক্তার কত টাকা নিচ্ছেন আর হাসপাতালই বা কত নিচ্ছে। এই স্বচ্ছতাটুকু না-এলে শুধু ডাক্তারদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পালা চলতে থাকবে। এটা চলতে পারে না।’’
ই এম বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের সময়ে আমার সহকারীর জন্য আলাদা বিল করা হয়। অথচ বেশির ভাগ অস্ত্রোপচারে সহকারী থাকেনই না।’’ অন্য এক চিকিৎসকের অভিযোগ আরও গুরুতর। তিনি বললেন, ‘‘হাসপাতাল দেখিয়েছে, আমি নাকি এক রোগীর ব্যয়বহুল একটি পরীক্ষা করেছি। বিল করে টাকাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ওই পরীক্ষা করিইনি। এ-সব তো চলছেই!’’
আরও পড়ুন: আইএমএ সভায় বক্তা জাল ডাক্তার
বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া অবশ্য এই ধরনের অভিযোগ মানতে চায়নি। সংগঠনের সহ-সভাপতি পি এল মেহতা জানান, যে-সব চিকিৎসক বেতনভোগী, তাঁরা মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতন পান। আর যাঁরা কনসালট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত, তাঁরা টাকা পান রোগী-পিছু। এর মধ্যে অস্বচ্ছতার কোনও প্রশ্নই নেই।
কোনও কোনও হাসপাতাল আবার এই ‘অস্বচ্ছতা’র জন্য দায়ী করছে ডাক্তারদেরই। যেমন, একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার (সিইও) জানান, যে-সব রোগী হাসপাতালের আউটডোরে দেখানোর পরে অস্ত্রোপচার করান, তাঁদের খরচ নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু কোনও চিকিৎসক যদি নিজের প্রাইভেট চেম্বারের রোগীকে হাসপাতালে এনে অস্ত্রোপচার করান, তা হলে সেই খরচ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নিজের ইচ্ছামতো কিছুটা বাড়াতে পারেন। সেই খরচের ১০ শতাংশ নেয় হাসপাতাল।
চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে সোমবার নবান্নে বৈঠক করেছেন মমতা। সেই প্রেক্ষিতে ডাক্তারদের প্রাপ্তির হিসেব-সহ বেসরকারি হাসপাতালের বিলে স্বচ্ছতা আনার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের এই পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসক-নেতারা। আইএমএ-র সর্বভারতীয় সম্পাদক কে কে অগ্রবাল বলেন, ‘‘এত দিন এই বিষয়ে কেউ কখনও কোনও প্রশ্ন তোলেনি। অথচ এটা ভুল বোঝাবুঝির অন্যতম কারণ। মুখ্যমন্ত্রী যদি এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা আনতে উদ্যোগী হন, তা হলে আমাদের সংগঠন সব রকম ভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy