Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুরুলিয়ায় পুলিশ হত্যার ৮ বছর পরে চাকরি স্ত্রীকে

পার্থবাবুর বৃদ্ধ বাবা-মা নির্মল ও মমতা বিশ্বাস থাকেন নৈহাটির বাড়িতে। দু’জনেই অসুস্থ। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তাঁদের দেখভাল করছেন বর্ণালীদেবী।

পার্থ বিশ্বাস

পার্থ বিশ্বাস

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৭
Share: Save:

পারিপার্শ্বিক প্রমাণ এবং ডিএনএ পরীক্ষা জানিয়ে দিয়েছিল, সেটি পার্থ বিশ্বাসেরই দেহ। মানতে পারেননি পার্থবাবুর স্ত্রী বর্ণালীদেবী। ছ’বছর দেহটি রাখা ছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত অক্টোবরে বর্ণালীদেবী সেখানে গিয়ে স্বামীর দেহ শনাক্ত করে তার সৎকার করেন বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর।

সেই পার্থ বিশ্বাস। রাজ্য পুলিশের ইনস্পেক্টর। বন্ধু সৌম্যজিৎ বসুকে নিয়ে ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর বেড়াতে গিয়ে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থেকে যিনি নিখোঁজ হয়ে যান। ছ’মাস পরে তাঁদের দেহ পাওয়া যায় অযোধ্যা পাহাড়ে। এত দিন পরে, গত ১৬ অগস্ট রাজ্য পুলিশের তরফে ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ড’ (সমবেদনার ভিত্তিতে)-এ চাকরি দেওয়া হল মৃত পুলিশ অফিসারের স্ত্রী বর্ণালী বিশ্বাসকে। এক পুলিশকর্তা জানান, দুর্গাপুরে রাজ্য পুলিশের ইন্ডিয়ান রিজার্ভ বাহিনীর ১ নম্বর ব্যাটেলিয়নে যোগ দেওয়ার কথা বর্ণালীদেবীর।

পার্থবাবুর বৃদ্ধ বাবা-মা নির্মল ও মমতা বিশ্বাস থাকেন নৈহাটির বাড়িতে। দু’জনেই অসুস্থ। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তাঁদের দেখভাল করছেন বর্ণালীদেবী। মমতাদেবী জানান, তাঁর স্বামী রেলে চাকরি করতেন। পেনশন পান, চিকিৎসার খরচও। পুলিশি সূত্রের খবর, পার্থবাবু শেষ যে-হারে বেতন পেতেন, এত দিন ধরে সেই হারে টাকা পাচ্ছিলেন বর্ণালীদেবী। তা ছাড়াও ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বর্ণালীদেবী বলেন, ‘‘আমার অসময়ে আপনারা কেউ এসে আমার পাশে দাঁড়াননি। এখন আর এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’

চাকরি পেতে এত দেরি কেন?

রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, পার্থবাবু যে মারা গিয়েছেন, প্রথমে সেটা বিশ্বাস করতে চাননি বর্ণালীদেবী। পার্থবাবু ও সৌম্যজিৎবাবু নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ছ’মাস পরে, ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন জানা যায়, অযোধ্যা পাহাড়ে পোঁতা আছে দুই বন্ধুর দেহ। মেরে পুঁতে দিয়েছিল মাওবাদীরা।

সৌম্যবাবুর দুই দাদা অভিজিৎবাবু ও সুজিতবাবু গিয়ে ভাইয়ের দেহ নিয়ে এসে সৎকার করেন। বর্ণালীদেবী জানিয়ে দেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। পার্থবাবুর বন্ধুরা বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সৌম্যবাবুর পরিবারের তরফে জানানো হয়, মুখ দেখে বোঝা না-গেলেও পায়ের কাটা দাগ, আঙুল দেখে চেনা গিয়েছিল তাদের ছেলেকে। সৌম্যবাবুর মা ও ছেলের দেহ থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়। প্রমাণিত হয়, সেটা সৌম্যবাবুরই দেহ।

একই ভাবে পার্থবাবুর বাবা-মায়ের থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়, ওটা ওই পুলিশ অফিসারেরই দেহ। কিন্তু নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন বর্ণালীদেবী। অগত্যা পার্থবাবুর দেহ রেখে দেওয়া হয় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত অক্টোবরে দেহ শনাক্ত করেন বর্ণালীদেবী। তার পরেই চাকরির আবেদন করেন তিনি।

পুলিশ জানায়, ১৯৯২ সালে সাব-ইনস্পেক্টর হিসেবে কলকাতা বিমানবন্দরে যোগ দেন পার্থবাবু। পরে ইনস্পেক্টর হন। ২০১০ সালে তিনি বাঁকুড়ায় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ১৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করছিলেন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশেও। রাজ্য জুড়ে তখন মাওবাদীদের রমরমা। হুগলির কামারপাড়া স্কুলের শিক্ষক ও বন্ধু সৌম্যবাবুকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার অছিলায় পার্থবাবু তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছে সন্দেহ করে মাওবাদীরা ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর পুরুলিয়ার বলরামপুর থেকে অপহরণ করে দুই বন্ধুকে। পরের দিন, ২২ অক্টোবর আসে মৃত্যুর খবর। দেহ পাওয়া যায় প্রায় ছ’মাস পরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Biswas West Bengal Police Maoist Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE