Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জোর জল্পনা তৃণমূলে

ভারতী ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতারাও কি এ বার কোপে

ভারতী ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত দুই পুলিশ আধিকারিককে সরানো হয়েছে আগেই। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শাসকদলের নেতাদের উপরও কোপ পড়তে চলেছে বলে জল্পনা তৃণমূলের অন্দরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

ভারতী ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত দুই পুলিশ আধিকারিককে সরানো হয়েছে আগেই। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শাসকদলের নেতাদের উপরও কোপ পড়তে চলেছে বলে জল্পনা তৃণমূলের অন্দরেই। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, কোপে পড়ার আশঙ্কায় কয়েকজন নেতা ভারতী ‘ঘনিষ্ঠ’ তকমা ঝেড়ে ফেলতে তৎপর হয়েছেন।

তৃণমূলের এক সূত্রে দাবি, জেলার এক তৃণমূল নেতা ভারতীর খুব ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন। ওই নেতা না কি দলের মধ্যেকার বিভিন্ন খবরাখবরও দিতেন তাঁকে। এখন অবশ্য ওই নেতা ভারতী ‘ঘনিষ্ঠ’ তকমা ঝেড়ে ফেলার বার্তা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করছেন। দলের অন্দরে তাঁর দাবি, প্রাক্তন পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তবে সেই যোগাযোগ তিনি রেখেছিলেন দলের স্বার্থেই!

ভারতী ঘোষের বদলির পর কি কোনও আশঙ্কায় রয়েছেন? জেলার ওই নেতার জবাব, “আশঙ্কা থাকার কি হয়েছে! আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল যেমন বলেছে, তেমন ভাবেই চলেছি। আগামী দিনেও সেই ভাবে চলব!” ওই বদলির প্রভাব দলের মধ্যে পড়বে না? তাঁর মন্তব্য, “একজন আধিকারিকের বদলি হয়েছে। এমন তো কত আধিকারিকই তো বদলি হয়। কারও বদলির প্রভাব দলের মধ্যে পড়বে কেন! দল যেমন চলছে, তেমনই চলবে। দল তো একটা নদীর মতো!”

দলের একাংশ অবশ্য মনে করছে, ভারতী জেলায় না থাকায় দল দুর্বল হতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় দলের গোষ্ঠী কোন্দলও মাথাচাড়া দিতে পারে? তৃণমূল অবশ্য এই সব আশঙ্কা, সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, “কেউ বদলি হলে দল দুর্বল হবে কিংবা দলে গোষ্ঠী কোন্দল বাড়বে, এ সব কথা একেবারেই ঠিক নয়।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ছ’বছর ছিলেন ভারতীদেবী। এই সময় ভারতীদেবীর ‘ঘনিষ্ঠ’ লোকেদের বৃত্তে জেলা তৃণমূলের কয়েকজন নেতা ঢুকেও পড়েছিলেন বলে দাবি। তৃণমূলের এক সূত্র মানছে, প্রাক্তন পুলিশ সুপারের ‘আশীর্বাদ’ না থাকলে অনেকেই আজ যে জায়গায় রয়েছেন, সেই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না। দল কিংবা প্রশাসনিক মহলে বাড়তি গুরুত্বও পেতেন না।

দলের এক সূত্রে দাবি, ভারতী ঘোষ পুলিশ সুপার থাকাকালীন তৃণমূলের কেউ কেউ তাঁর নামে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়ে আসার ‘সাহস’ও দেখিয়েছেন। যেমন, জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি। অন্য কারও কাছে নয়, খোদ দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে ভারতীর নামে নালিশ জানিয়ে এসেছিলেন অমূল্যবাবু। জেলা কর্মাধ্যক্ষ থাকার সুবাদে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী পেতেন অমূল্যবাবু। গত সেপ্টেম্বরে আচমকাই তাঁর রক্ষী প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলের একাংশ মনে করে, ভারতীর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ ছিল না বলেই রক্ষী প্রত্যাহার করা হয়েছিল। অমূল্যবাবু বলেন, “আমি আজও জানি না কেন রক্ষী প্রত্যাহার করা হয়েছিল। জানার চেষ্টাও করিনি!” আপনি কি দলের রাজ্য সভাপতির কাছে নালিশ জানিয়ে এসেছিলেন? অমূল্যবাবুর জবাব, “নালিশের কোনও ব্যাপার নয়! কিছু সত্যি কথাই বলে এসেছিলাম।”

ভারতী ঘোষ তো সরেছেন। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠরা অন্তর্ঘাত করবেন না তো, এমন আশঙ্কার কথা ঘুরছে শাসকদলের অন্দরে। ভারতী ‘ঘনিষ্ঠ’রা অবশ্য সুযোগ বুঝে পাল্টি খেতে শুরু করেছেন। কেমন? প্রাক্তন জেলা পুলিশ সুপারের ‘ঘনিষ্ঠবৃত্তে’ ছিলেন বলেই না কি দলের মধ্যে আপনার তড়িৎ গতিতে উত্থান? জেলার এক তৃণমূল নেতার জবাব, ‘‘ওরম মনে হয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE