প্রস্তুতি: হাবড়ায় তৈরি হয়েছে তোরণ। বুধবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক ও সুজিত দুয়ারি
যাঁর জন্য এত কিছু, শেষমেশ তিনি মঞ্চে আসার মতো অবস্থায় থাকবেন তো?
এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গাইঘাটায়। আজ, বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানিদেবীর (বড়মা) জন্ম শতর্বষ উপলক্ষে অনুষ্ঠান। কিন্তু অশক্ত দেহে বড়মা অনুষ্ঠান মঞ্চে আসতে পারবেন কিনা, সংশয়ে অনেকেই।
বড়মার মঞ্চে আসাটা দল হিসাবে তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মমতার সঙ্গে মতুয়া-বাড়ির সম্পর্ক বরাবরই ভাল। কিন্তু ইদানীং মতুয়া ভোটারদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে তৎপর বিজেপি। বাড়ির ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণকে মমতা এ রাজ্যের মন্ত্রী করেছিলেন। সেই মঞ্জুলের সঙ্গে এখন দলের মুখ দেখাদেখি নেই। মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রত বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুরের বিরুদ্ধে। ভোটে সুব্রত জেতেননি ঠিকই, কিন্তু মতুয়াবাড়ির একাংশকে সামনে রেখে বিজেপি মতুয়াভক্তদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। মঞ্জুলের ছোট ছেলে তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনুর ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে। মুকুল রায়ের সঙ্গেও শান্তনুর সুসম্পর্কের কথা জানেন মতুয়ারা।
এই পরিস্থিতিতে মতুয়া ভোট-ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে সচেষ্ট তৃণমূল শিবির। ব়ড়মার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর আসাকে শান্তনুরা সরাসরি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ই বলছেন। তৃণমূল তা মুখে মানতে না চাইলেও দলের স্থানীয় নেতারা বিলক্ষণ মানছেন, আসন্ন লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই মতুয়া বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন মমতা। তাঁর মঞ্চে বড়মার উপস্থিতি সে কারণেই এত গুরুত্বপূর্ণ দলের কাছে। কারণ, ব়ড়মা যতই অশক্ত হোন না কেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এখনও প্রশ্নাতীত। বড়মাকে মঞ্চে হাজির করা তাই দলের কাছেও জরুরি।
প্রস্তুতি: নিকোনো হচ্ছে ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি। বুধবার ছবি টি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক ও সুজিত দুয়ারি
মতুয়া-ভোটারদের মধ্যে বিভাজন রুখতে চেয়ে মঞ্জুলকেও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। খাতায়-কলমে তারাই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। কিন্তু গোটা কর্মকাণ্ডের পিছনে যে তৃণমূলই মূল মাথা, তা কোনও মহলের কাছেই অস্পষ্ট নয়। সভায় মঞ্জুল যান কিনা, সে দিকেও তাকিয়ে ঘাসফুল শিবির।
অনুষ্ঠান ঘিরে হইহই রইরই কাণ্ড চলছে মতুয়াবাড়িতে। বুধবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, ঠাকুরবাড়ির উঠোনে গোবর লেপছেন সাংসদ মমতা ঠাকুর। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও মতুয়াবাড়ির বড় বৌমা তিনি। সঙ্ঘাধিপতিও বটে। সাংসদের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে আসছেন বলে কথা। সব ব্যবস্থা নিজের হাতে দেখে নিচ্ছি। এমনিতেই সব কাজ নিজেই করি। কাজের কোনও ছোট-বড় হয় না।’’ গোটা ঠাকুরনগর ইতিমধ্যেই মুড়ে ফেলা হয়েছে বড়মা ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া তোরণে। বড়মার বাড়ি নতুন করে রঙ করা হয়েছে। দেওয়ালে লাগানো হয়েছে কাগজের বাহারি ফুল। চারিদিকে মতুয়াদের পতাকা নিশান ও তৃণমূলের পতাকা। শাসক দল তাদের যাবতীয় সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একমাস ধরে ঠাকুরনগরে সভার প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত। দফায় দফায় দলীয় নেতৃত্ব, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মমতা ঠাকুর এবং জ্যোতিপ্রিয়র দাবি, সভায় ৩ লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে। হাবড়া, গাইঘাটা, বারাসত-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় জায়েন্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে সেখানে। তৃণমূল সূত্রের খবর, অসমে যে সব মতুয়াদের নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই সভায় আসবেন। মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ, বাংলাদেশ থেকেও অনেকে আসছেন। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের ধর্মগুরু হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ আরও কিছু প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy