গোপন হোয়াটসঅ্যাপ রবে না গোপনে!
এত দিন জানা ছিল, আড়ি পেতে পুলিশ ল্যান্ডলাইন ও মোবাইল ফোনে হওয়া কথা শুনতে পারে, এসএমএস পড়তে পারে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো ও পাওয়া বার্তা গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে বলে সাধারণ মানুষ মনে করতেন। ওই ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ কে, কখন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করছেন, সেই সব তথ্য পাওয়াও বৈদ্যুতিন নজরদারির বাইরে ছিল। কিন্তু এ সবই অতীত। এ বার হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষাকবচ ভেদ করার বাণও গোয়েন্দাদের হাতে চলে এসেছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি ইজরায়েল থেকে নতুন একটি প্রযুক্তি কিনেছে লালবাজার। যা ব্যবহার করছেন মূলত জঙ্গি দমনের জন্য তৈরি ‘স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা। গত বছরের শেষে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা ইজরায়েলে যান। প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা দিয়ে এই প্রযুক্তি কেনার বিষয়টি তখন চূড়ান্ত হয়। এ বছর কেনা হয়েছে সেটি। ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ-এর গোপনীয়তার বর্ম ছিন্ন করে চলছে নজরদারি।
লালবাজারের শীর্ষ কর্তারাও বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করতে পারেননি। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গের মন্তব্য, ‘‘এ নিয়ে কোনও কথা বলা যাবে না।’’
হোয়্যাটসঅ্যাপে লেখা থাকে, এই অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে পাঠানো বার্তা সাঙ্কেতিক নিরাপত্তায় মোড়া বা ‘এনক্রিপটেড’। অর্থাৎ দু’জনের কথোপকথন তৃতীয় কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু ইজরায়েলি ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে সাঙ্কেতিক মেসেজ হাতিয়ে নেওয়া ও তার পর সাঙ্কেতিক বেড়াজাল ভেঙে মেসেজ পড়ে ফেলাও সম্ভব।
আরও পড়ুন: গোপন ‘লাইক’টি রবে না গোপনে, সব কিছু জানিয়ে দেবে ফেসবুকই!
তথ্যের নিরাপত্তার জন্য সাঙ্কেতিক প্রযুক্তি বা ‘ক্রিপটোগ্রাফি’ ব্যবহার করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা।
এ ক্ষেত্রে সেই নিরাপত্তার বেড়াজাল ভাঙা হচ্ছে কী ভাবে? সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের প্রযুক্তির নাম ‘ম্যান ইন দ্য মিডল অ্যাটাক’। অর্থাৎ দুই ব্যক্তির মেসেজ চালাচালির মাঝে নেটওয়ার্ক থেকে মেসেজ হাতিয়ে নেওয়া। তার পর প্রযুক্তির মাধ্যমেই সাঙ্কেতিক মেসেজটিকে পড়া যায়। গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, হোয়্যাটসঅ্যাপের মাধ্যমে করা ফোন এবং ভিডিও-কল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ঘটনাচক্রে, রাজ্য প্রশাসন সূত্রে গত কয়েক মাসে কয়েক জন মন্ত্রী ও সচিবের হোয়্যাটসঅ্যাপ ব্যবহারে রাশ টানার কথাও শোনা যাচ্ছে।
মেসেজ চালাচালির অ্যাপে এই নজরদারি কি বৈধ? গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, যে ভাবে সাইবার দুনিয়ায় জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়ছে, তাতে নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। আম নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি মারার ইচ্ছে পুলিশের নেই। সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরীর মতে, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ-প্রশাসনের এই নজরদারির এক্তিয়ার রয়েছে।’’ কিন্তু সেই ক্ষমতার অপব্যবহার হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আইনজীবীদের একাংশের মনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy