Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফের মৃত্যু জ্বরে, আতঙ্ক দেগঙ্গায়

তিন দিনে জ্বর ও ডেঙ্গিতে তিন জনের মৃত্যু হল আমুলিয়ায়।

নাজিরা বিবি

নাজিরা বিবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

পরবের দিনে দেগঙ্গার আমুলিয়া এলাকার ঘরে ঘরে জ্বর আর স্বজনদের চোখে জল। জ্বরে মৃত্যুর আতঙ্ক চেপে বসেছে বুকে। যেমন রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসার আগেই অজানা জ্বরে রবিবার রাতে বারাসত জেলা হাসপাতালে মারা গেলেন নাজিরা বিবি (২৮) নামে এক মহিলা। এই নিয়ে তিন দিনে জ্বর ও ডেঙ্গিতে তিন জনের মৃত্যু হল আমুলিয়ায়।

ওই এলাকার শুন্দেপুকুরের বাসিন্দা নাজিরা পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েও জ্বর না-কমায় শনিবার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। সোমবার রক্তের রিপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। রবিবার সকালে নাজিরার অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্বজনেরা তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। গভীর রাতে সেখানেই মারা যান নাজিরা। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রাতে অবস্থার অবনতি হলেও কোনও চিকিৎসক আসেননি। নাজিরার জা মোসলেমা বিবি বলেন, ‘‘রাতে পেটের যন্ত্রণায় ওকে ছটফট করতে দেখে আমি নার্সের কাছে যাই। নার্স একটা পাউডার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘খাইয়ে দিন।’ কিন্তু তখন কোনও ডাক্তার সেখানে ছিলেন না। ও মারা গেল আমার চোখের সামনেই।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘সকালে ভর্তির পরে বিকেলের দিকে ওই রোগিণী সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু রাতের দিকে হঠাৎই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। চিকিৎসক বেশ কয়েক বার তাঁকে দেখেছিলেন।’’ এ দিন নাজিরার দেহ বাড়ি ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। সাড়ে তিন এবং দেড় বছরের মেয়ে দুই মেয়েকে কোলে নিয়ে তাঁর স্বামী ওবাইদুল্লা মণ্ডল বলেন, ‘‘জ্বরের সঙ্গে বমি হচ্ছিল ওর। মল হচ্ছিল কালো কালো। সরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করিয়েও জানতে পারলাম না, ডেঙ্গি কি না।’’

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া ব্লকেও ঘরে ঘরে ছড়িয়েছে জ্বর ও ডেঙ্গি। হাবড়ার লাগোয়া দেগঙ্গার আমুলিয়ায় শুক্রবার মারা যান ঝিকুরিয়ার বাসিন্দা মিঠুন দাস। শনিবার মারা যান শিবানী দে। রবিবারেও জ্বরে আরও এক জনের মৃত্যুর পরে ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে দেগঙ্গার বিভিন্ন প্রান্তে। ২০১৭ সালের মতোই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, টিভিতে ডেঙ্গির প্রচার চললেও পঞ্চায়েত থেকে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। শুন্দেপুকুরের বাসিন্দা মিরাজ আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে এক বার রাস্তার ধারে তেল ছড়াতে দেখা গিয়েছিল। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিছুই করা হচ্ছে না। জানি না, আর কত জনের মৃত্যুর পরে প্রশাসন সজাগ হবে!’’

জ্বর ও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ১ অগস্ট দুর্গাপুরের বিধাননগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড় গ্রামের বাসিন্দা মামণি নাগ (৩২)। রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, হাসপাতালের রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে তাঁর রক্তে ডেঙ্গি আইজিএম পরীক্ষায় ‘রিঅ্যাক্টিভ’ ফল এসেছিল। তবে ডেঙ্গি আইজিজি এবং এনএস১ পরীক্ষায় ‘নন-রিঅ্যাক্টিভ’ ফল আসে। ‘‘মহিলার মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছি। ডেঙ্গি কি না, এখনই বলা যাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে,’’ বলেন পশ্চিম বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস হালদার।

কলকাতার পুরসভার পর্ণশ্রী-সহ পাঁচটি এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। মহানগরে এ দিন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। মহেশতলা, রাজপুর-সোনারপুর, ভাঙড়-২, বিষ্ণুপুর-২ ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Death Dengue Fever Deganga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE