Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুচরোর আকালে ধান কাটার মজুরি ধানই

পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট কেউ নিচ্ছেন না। নতুন নোট ও খুচরোর বড়ই আকাল। আর তাই, মালদহের গ্রামে গ্রামে ধান কাটতে বকলমে বিনিময় প্রথাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ, ধান কাটার মজুরি ধানই।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট কেউ নিচ্ছেন না। নতুন নোট ও খুচরোর বড়ই আকাল। আর তাই, মালদহের গ্রামে গ্রামে ধান কাটতে বকলমে বিনিময় প্রথাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ, ধান কাটার মজুরি ধানই। কালিয়াচক ৩ ব্লক থেকে রতুয়া বা গাজোল থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর এখন এই শর্তেই ধান কাটা চলছে। যে কৃষকরা ওই প্রথায় রাজি নন, তাঁদের পেকে যাওয়া ধান মাঠেই গড়াগড়ি খাচ্ছে।

মুদ্রা আসার আগে বিনিময় প্রথা ছিল। মুদ্রা চালুর পরেও তা কোথাও কোথাও রয়ে গিয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে। উৎপাদিত ফসলের কিছু অংশ কৃষি শ্রমিককে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়ার প্রথা এখনও কোথাও কোথাও রয়েছে। তবে শুধু ফসলের অংশই নয়। টাকাও দেওয়া হত। কিন্তু এখন খুচরোর আকালে শুধু ফসলের অংশ দিয়েই পারিশ্রমিক মেটানো হবে বলে স্থির করেছেন মালদহের অনেক কৃষক। ধান কেটে মাড়াই করার পরে এক কুইন্ট্যাল ধানে শ্রমিককে কোথাও ৪০ কেজি বা কোথাও ৩৫ কেজি ধান মজুরি হিসেবে মেটানো হচ্ছে।

কী বলছেন সেই কৃষকরা? রতুয়ার ভগবানপুরের ধানচাষি সফিকূল ইসলাম বলেন, ‘‘শ্রমিকরা ধান কাটার মজুরি চেয়েছিলেন দিন প্রতি চারশো টাকা। কিন্তু পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট দেওয়া যাবে না।’’ সফিকুলের ৩৫ বিঘার জমিতে ধান কাটাতে ১০ জন শ্রমিক দরকার। কিন্তু তাঁর কাছে ওই শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে সেই পরিমাণ খুচরো ১০০ বা ৫০ টাকার নোট নেই। ব্যাঙ্কে এত ভিড় যে হত্যে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘তাই শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি ধান বিনিময়ের।’’ এ দিন ধান কাটাও শুরু হয়েছে। কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপগঞ্জের ধানচাষি সুকুমার সরকার জানান, ১০০ টাকার নোট না মেলায় বাধ্য হয়েই জমির ধান কাটাতে বিনিময় প্রথা চালু করতে হয়েছে তাঁকে। এক বিঘে জমির ধান কেটে শ্রমিকরা দেড় কুইন্ট্যাল ধান নেবেন। তাঁর কথায়,, ‘‘এই ব্যবস্থায় যদি রাজি না হতাম, তবে পেকে যাওয়া ধান আমার মাঠেই নষ্ট হত।’’ গাজোলের আলালের কৃষক দীনেশ রায় বলেন, ‘‘খুচরো নোটের সমস্যার জন্যই ধানের বিনিময়ে ধান কাটাচ্ছি।’’ মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘এমন ঘটনা কোথায় কোথায় হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে টাকার অকাল খুব দ্রুতই মিটবে।’’ খুচরো টাকার আশায় যাঁরা ধান কাটানো শুরু করেননি তাঁদের পাকা ধান কিন্তু মাঠেই রয়েছে। এ ভাবে চললে তাঁরা ফসল নষ্টেরও আশঙ্কা করছেন। গাজোলের বাবুপুরের কৃষক রহমৎ আলির কথায়, ‘‘আমার জমির ধান নুয়ে পড়ছে। কিন্তু ধান কাটার বদলে ধানই দিতে পারব না। তা হলে অনেক ক্ষতি।’’ তিনি টাকার অপেক্ষায় রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shortage of Cash Crop instead of Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE