Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল দিনলিপিতে প্রকল্প নিয়ে ‘ভুল’ তথ্য, বিতর্ক

কোন ছাত্র বা ছাত্রী কী ভাবে কতটা এগোচ্ছে, তা বুঝতে চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুলপড়ুয়াদের ডায়েরি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই ডায়েরি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কেননা তাতে কেন্দ্র বা কেন্দ্র-রাজ্যের বেশ কিছু যৌথ প্রকল্পকে রাজ্য সরকারের প্রকল্প বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

কোন ছাত্র বা ছাত্রী কী ভাবে কতটা এগোচ্ছে, তা বুঝতে চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুলপড়ুয়াদের ডায়েরি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই ডায়েরি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কেননা তাতে কেন্দ্র বা কেন্দ্র-রাজ্যের বেশ কিছু যৌথ প্রকল্পকে রাজ্য সরকারের প্রকল্প বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই ডায়েরি বা ‘বিদ্যালয় দিনলিপি’ দেওয়া হয় ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, সেই দিনলিপিতে এমন অন্তত আটটি প্রকল্প রাজ্যের বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে চালায়। প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে মিড-ডে মিল, ইনস্পায়ার অ্যাওয়ার্ড বা উৎসাহ পুরস্কার, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভাতা, আয়রন ট্যাবলেট, স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা, স্কুল-পোশাক, নির্মল বিদ্যালয় প্রভৃতি। শিক্ষা মহলের একাংশের প্রশ্ন, পড়ুয়াদের অগ্রগতি দেখার জন্য বিতরিত দিনলিপিতে প্রকল্পের পরিচয় দিতে গিয়ে এ ভাবে তথ্য বিকৃত করা হবে কেন?

আলোচিত প্রকল্পগুলির মধ্যে মিড-ডে মিল বহুচর্চিত। এই প্রকল্প চালানোর জন্য ৬০ ভাগ অর্থই আসে কেন্দ্রের কাছ থেকে। ৪০ ভাগ দেয় রাজ্য। তবে কেন্দ্রের টাকা যে নিয়মিত পাওয়া যায় না, সেই বিষয়ে বারে বারেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই প্রকল্পকে শুধু রাজ্যের নিজেদের প্রকল্প বলে দাবি করায় শিক্ষা মহল বিস্মিত।

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের এক আধিকারিকের বক্তব্য, শিক্ষা যুগ্ম তালিকাভুক্ত। বহু প্রকল্পেই কেন্দ্র-রাজ্য টাকা খরচ করে। তাই এই ধরনের প্রচার নীতিগত ভাবে ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আরও বেশ কিছু রাজ্য এই ধরনের প্রচার চালাচ্ছে।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই ধরনের প্রকল্পে নিজেদের দাবির পক্ষে সওয়াল করছেন। ‘‘এই সব প্রকল্পে আমরাও টাকা দিই। এগুলো আমাদেরও প্রকল্প। তাই অবশ্যই আমরা প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রচার করব। সকলকে জানাব,’’ শুক্রবার বলেন পার্থবাবু।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডলের মতে, রাজ্যের এই ভূমিকা অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী, পড়ুয়াদের মধ্যে ব্যাগ-জুতো বিলি, মিড-ডে মিলের থালা-বাসন— এ-সবই রাজ্যের প্রকল্প। কিন্তু যে-সব প্রকল্পে সরাসরি কেন্দ্রের ভূমিকা রয়েছে, তা নিজেদের বলে চালানো বিস্ময়কর। স্কুল ডায়েরিতে এই সব তথ্য থাকায় পড়ুয়ারা তো ভুল তথ্য শিখবে।’’

কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘ডায়েরিতে রাজ্যের প্রকল্প বলে সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।’’ ওই দিনলিপিতে ছুটি সংক্রান্ত তথ্যও বিভ্রান্তিকর বলে সৌদীপ্তবাবুর অভিযোগ। তিনি জানান, দিনলিপির প্রথম দিকে দু’রকম ছুটির তালিকা রয়েছে। একটি রাজ্য সরকারের অনুমোদিত ছুটির তালিকা। অন্যটি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদিত নমুনা ছুটির তালিকা। যার শেষে লেখা আছে, বিদ্যালয়গুলি নিজেদের প্রয়োজনে দিন বদল করতে পারে। সৌদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘বিদ্যালয়গুলি সুবিধামতো ছুটির দিন পরিবর্তন করলে পড়ুয়ারা তো বিভ্রান্ত হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Education Mid Day meal Partha Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE