Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সূর্যদের দায়িত্ব বাড়িয়ে বার্তা ইয়েচুরির

শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দই একমাত্র মাপকাঠি নয়! যেখানে দলের শক্তি যেমন, সংগঠনে সেই রাজ্যের গুরুত্বও তেমন। সিপিএমের হাল ধরে দলের অন্দরে এই নীতিই চালু করে দিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। দলের মধ্যে বিভাজন এবং ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে এ বার সংগঠনের সার্বিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে। তিনিই এখন সিপিএমের কেন্দ্রীয় স্তরে সাংগঠনিক কমিটির নেতৃত্বে। আগে যে ভার ছিল এস রামচন্দ্রন পিল্লাইয়ের কাঁধে।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দই একমাত্র মাপকাঠি নয়! যেখানে দলের শক্তি যেমন, সংগঠনে সেই রাজ্যের গুরুত্বও তেমন। সিপিএমের হাল ধরে দলের অন্দরে এই নীতিই চালু করে দিলেন সীতারাম ইয়েচুরি।
দলের মধ্যে বিভাজন এবং ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে এ বার সংগঠনের সার্বিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে। তিনিই এখন সিপিএমের কেন্দ্রীয় স্তরে সাংগঠনিক কমিটির নেতৃত্বে। আগে যে ভার ছিল এস রামচন্দ্রন পিল্লাইয়ের কাঁধে। কিন্তু কারাটকে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশিই সাংগঠনিক কমিটিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এনে ফেলেছেন ইয়েচুরি। কারাটের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে এ বার আনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ— এই পাঁচ রাজ্যের সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন, বিজন ধর, জি রামকৃষ্ণন এবং পি মধুকে। আগে পিল্লাইয়ের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে ছিলেন হান্নান মোল্লা, ওয়াই শ্রীনিবাস রাওয়ের মতো দিল্লির সদর দফতরে কর্মরত নেতারা।
নতুন এই সাংগঠনিক কমিটি দলের নবগঠিত পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে বিশেষ হইচই ছাড়াই। ইয়েচুরির সাফ যুক্তি, সারা দেশে সর্বত্র সিপিএমের শক্তি বলার মতো নয়। যে রাজ্যে দলের কিছুটা সংগঠন আছে, যেখানে দলের প্রতীকে প্রার্থীরা উল্লেখ করার মতো ভোট পান, সেই সব রাজ্যকেই এখন সিপিএমের সার্বিক সংগঠন পরিচালনার ভার নিতে হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্পাদকদের দিল্লিতে পড়ে থাকার দরকার নেই। তাঁরা নিজেদের রাজ্যে কাজ করবেন এবং কমিটির বৈঠকের সময় মতামত জানাতে আসবেন। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘সংগঠনের যুক্তিনির্ভর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে বলা যায়!’’

বাংলা, কেরল ও ত্রিপুরা বরাবরই বাম ঘাঁটি হিসাবে এগিয়ে। ক্ষমতা হারানোর পরে বাংলায় সংগঠনে ধস এবং কেরলে নানা ধাক্কা সত্ত্বেও তারা এখনও অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে। দুই রাজ্যেই আগামী বছর বিধানসভা ভোট। দুই রাজ্যেই দলের দুই নতুন সম্পাদককে সাংগঠনিক কমিটিতে নিয়ে এসেছেন ইয়েচুরি। ছোট রাজ্য হলেও ত্রিপুরা বারেবারেই বামেদের ভোট বাড়িয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। সে রাজ্যের সম্পাদক এখনও পলিটব্যুরোতে জায়গা না পেলেও তাঁকে সাংগঠনিক কমিটিতে এনে ‘মর্যাদা’ দিতে চেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। আবার ক্ষমতায় কখনও না এলেও তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রে সিপিএমের সংগঠন আছে। বস্তুত, ওই দুই রাজ্যের সংগঠন ভোট-নির্ভরও নয়। দক্ষিণী ওই দুই রাজ্যেরই সংগঠনে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। তার মধ্যে তামিলনাড়ুর রামকৃষ্ণন এ বার দলের পলিটব্যুরোতেও এসেছেন।

সাংগঠনিক কমিটি ঢেলে সাজার পাশাপাশিই কেরলে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বিচারের জন্য গঠিত পলিটব্যুরো কমিশনের দায়িত্বও এ বার হাতে নিয়েছেন ইয়েচুরি। আগে ওই কমিশনের মাথায় ছিলেন কারাট। কমিশনে কারাট, ইয়েচুরি, পিল্লাই, বি রাঘবুলু, এ কে পদ্মনাভনের সঙ্গেই ছিলেন নিরুপম সেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পলিটব্যুরো থেকেই সরে দাঁড়ানোর পরে কমিশন এখন পাঁচ জনের। দলের একাংশের বক্তব্য, কারাটের বদলে ইয়েচুরি কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ায় এ বার আর কেরলের বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনকে একতরফা শাস্তি দেওয়া সহজ হবে না! নবতিপর নেতার যুক্তিও শোনা হবে। ইয়েচুরির অবশ্য ব্যাখ্যা, কমিশনের কোনও আনুষ্ঠানিক মাথা ছিলেন না। এখনও কেউ নেই। তাঁর বক্তব্য, এটা পলিটব্যুরো কমিশন। স্বাভাবিক নিয়মেই সাধারণ সম্পাদক এই কমিশনের বৈঠক ডাকার অধিকারী হবেন।

বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে এ বার পিল্লাইয়ের বাসনা ঠেকিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেছিলেন ইয়েচুরি। এর পরে সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়ার পরে পিল্লাই যাতে একেবারেই ‘কোণঠাসা’ না হয়ে পড়েন, তার জন্য চার সদস্যের কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিশনের মাথায় আনা হয়েছে তাঁকে। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্য বলছেন, ‘‘নতুন দায়িত্ব নিয়েই বিপ্লব তো সম্ভব নয়! তাই ভারসাম্যের নীতি রেখেও সাধারণ সম্পাদক বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কাজের বহর দেখেই এখন সংগঠনে দায়িত্ব বাড়বে বা কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE