Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্নাতক স্তরে প্রথম মানবাজারের আস্তিক, জনমজুরি খেটেও ছাড়েননি পড়াশোনা

পুরুলিয়ার মানবাজার ১ ব্লকের বেঞ্চাবনি গ্রামের সেই আস্তিক মাহাতোই ৬৬ শতাংশেরও বেশি নম্বর নিয়ে সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস (সাম্মানিক) স্নাতক স্তরে প্রথম হয়েছেন।

আস্তিক মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

আস্তিক মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

টানাটানির সংসার। মাধ্যমিকের পরে ছেলেকে বাবা বলেছিলেন, ‘‘আর পড়ে কাজ নেই। বরং জনমজুরি করলে সংসারের সুরাহা হবে।’’ ছেলে চেন্নাইয়ে গিয়ে মাসখানেক রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে টাকা জমিয়ে ফিরে আসেন। সেই টাকা দিয়ে ভর্তি হন একাদশ শ্রেণিতে।

উচ্চ মাধ্যমিকের পরে বাবা ফের বলেছিলেন, ‘‘অনেক হয়েছে। এ বার থাম।’’ ছেলে ফের চেন্নাই চলে যান। ফের জোগাড়ের কাজ। ফের টাকা জমানো। ফিরে ভর্তি হওয়া কলেজে। পড়ার খরচ চালাতে গৃহশিক্ষকতা, ইটভাটা ও জমিতে জনমজুরি।

পুরুলিয়ার মানবাজার ১ ব্লকের বেঞ্চাবনি গ্রামের সেই আস্তিক মাহাতোই ৬৬ শতাংশেরও বেশি নম্বর নিয়ে সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস (সাম্মানিক) স্নাতক স্তরে প্রথম হয়েছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিলেছে সোনার মেডেল ও শংসাপত্র। এখন আস্তিকের বাবা বঙ্কবিহারী মাহাতোও বলছেন, ‘‘আমার কথায় ছেলে পড়া ছাড়লে বড় ভুল হত। ও আমার গর্ব। এখন বলছি, পড়াশোনা চালিয়ে যা।’’

পড়া চালাতে কম কষ্ট করেননি বছর বাইশের আস্তিক। বঙ্কবিহারীবাবু সকাল হলেই বেরোন জনমজুরিতে। আস্তিকের মা অনেকদিন মারা গিয়েছেন। তাই সংসারের কাজ, রান্নাবান্না, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা— সব দায়িত্ব সামলান আস্তিক।

আরও পড়ুন: মেয়েদের ‘শরীর খারাপ’ নিয়ে কাটবে কবে সঙ্কোচ

সব সামলে সকালে পড়া হত না বলে তাঁর ভরসা রাত জাগা। আস্তিকের কথায়, ‘‘বই কেনা বা গৃহশিক্ষক রাখার ক্ষমতা ছিল না। বন্ধুদের থেকে বই চেয়ে, স্কুলের-কলেজের শিক্ষকদের কাছে পড়া বুঝে পড়াশোনা চালিয়েছি। তাই এত সহজে পড়াটা ছাড়তে চাইনি।’’

মানবাজার থানার জিতুজুড়ি দেবাশিস হাইস্কুল থেকে পাশ করে তিনি ভর্তি হন পুরুলিয়ার জে কে কলেজে। এখন সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে স্নাতকত্তোরের পড়াশোনা। এখনও তিনি বাবাকে সাহায্য করতে জনমজুরি খাটতে যান।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু এক গোষ্ঠী মত চাপিয়ে দিচ্ছে ক্ষমতার জোরে

জিতুজুড়ি দেবাশিস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ত্রিলোচন মল্লিক ও স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সমরেশ মুখুটি এক কথায় বলছেন, ‘‘শুধু মেধাবী নয়, আস্তিক পরিশ্রমীও।’’ স্কুলের সহপাঠী চন্দন মাহাতোর মন্তব্য, ‘‘জেদ ধরে পড়া চালিয়ে যাচ্ছে বলেই সাফল্য পেল।’’ জেকে কলেজের অধ্যক্ষ শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ার ইচ্ছে থাকলে দারিদ্র যে বাধা হয় না, আস্তিক করে দেখিয়েছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান গৌতম মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরাও আস্তিককে নিয়ে আশাবাদী।

আস্তিকের অবশ্য ইচ্ছে, ‘‘গরিব ঘরের ছেলেদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখাব। তাই ভবিষ্যতে কলেজে পড়াতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manbazar Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE