Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সহায় ফেসবুক, ফেরা দশ বছর নিখোঁজের

গ্রামের নাম, ‘ফেসবুক’ আর এক যুবকের সহৃদয়তা বাড়ি ফেরাল প্রায় দশ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তাহাজত শেখকে। 

তাহাজত শেখ ও মহম্মদ শরিফ

তাহাজত শেখ ও মহম্মদ শরিফ

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

গ্রামের নাম, ‘ফেসবুক’ আর এক যুবকের সহৃদয়তা বাড়ি ফেরাল প্রায় দশ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তাহাজত শেখকে।

বছর ছাব্বিশের তাহাজতকে কাছে পেয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ পূর্ব বর্ধমানের কালনার কুতুবউদ্দিন আর তাঁর স্ত্রী তাহেদা। চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে তাঁরা বারবার ‘দোয়া’ মাগছিলেন মহম্মদ শরিফের জন্য। বলছিলেন, ‘‘পরের জন্য এখনও এতটা কেউ করে! খোদা ওকে ভাল রাখুন।’’

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওলজিতে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শরিফের বাড়ি তমলুকে। পড়াশোনার জন্য হাওড়া স্টেশনের কাছে আত্মীয়ের কাছে থাকেন। স্টেশন লাগোয়া মাছ-বাজারে দেখা হত তাহাজতের সঙ্গে। বাড়ি কোথায় জানতে চাইলেই আমতা আমতা করতেন তাহাজত। গ্রামের নাম বলতেন, ‘মালতিপুর’। দু-এক বার বলেছিলেন বাবার নাম, ‘কুতুবউদ্দিন’। বছর তেইশের শরিফ বোঝেন, সব ঠিক নেই। মাস তিনেক আগে ‘ফেসবুক’-এ মালতিপুরের বাসিন্দাদের খোঁজ করেন। জনা কুড়ির নাম আসায় তাঁদের ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠান। পাঁচ জন সাড়া দেন। তাঁদের ওই যুবকের কথা জানান শরিফ। গ্রাম-কালনার বাসিন্দা ফুলহক শেখ তাঁকে জানান, পাশের গ্রাম মালতিপুরের একটি ছেলে বছর দশেক ধরে নিখোঁজ বলে শুনেছেন। শরিফ ফুলহককে তাহাজতের ছবি পাঠান।

মালতিপুরের বাসিন্দা কুতুবউদ্দিন শেখ সে ছবি দেখেই চমকে ওঠেন। শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমবার রাতে স্ত্রী তাহেদা বিবিকে নিয়ে হাওড়া রওনা হন কুতুবউদ্দিন। নতুন বছরের প্রথম দিন, মঙ্গলবার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।

প্রান্তিক চাষি কুতুবউদ্দিন জানান, সংসারে অভাব। তাই দশ বছর চার মাস আগে দিল্লিতে এক কারখানায় শ্রমিকের কাজে পাঠানো হয় তাহাজতকে। মাস তিনেক পরে হঠাৎ নিখোঁজ হন তিনি। কুতুবউদ্দিন বলেন, ‘‘দিল্লি গিয়ে খুঁজেছিলাম ওকে। না পেয়ে পুলিশে ডায়েরি করি।’’

তাহেদা বিবি জানান, তাঁকে দেখেই চিনতে পারেন ছেলে। দম্পতির দাবি, তাহাজত তাঁদের জানান, দিল্লির রাস্তায় তাঁর মোবাইল ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। মারধরেরও শিকার হন। বেশ কিছু দিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হলেও অনেক স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। কাজ নেন দিল্লির হোটেলে। বছর সাতেক আগে কয়েকজন বাঙালি হোটেলে গেলে তাঁদের সঙ্গে হাওড়া ফেরেন। সেখানে মাছ-বাজারে কাজ করছিলেন। শরিফের সাহায্য না পেলে হয়তো সেখানেই থাকতেন।

শরিফ বলছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যই এটা সম্ভব হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Facebook
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE