Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভূমিকম্প হচ্ছে! দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে মৃত্যু যুবকের

শিলিগুড়িতে ভূমিকম্পের আতঙ্কে চোট পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। গত বছর এপ্রিলে মৃদু কম্পনে আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিন জন। পা ভেঙেছিল এক জনের। কিন্তু এ দিনের মতো মর্মান্তিক পরিণতি হয়নি কারওই।

সন্তানহারা: সম্রাটের দেহ আঁকড়ে মা। নিজস্ব চিত্র।

সন্তানহারা: সম্রাটের দেহ আঁকড়ে মা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

সকাল তখন সওয়া ১০টা। হঠাৎই কেঁপে ওঠে বাড়ি। শিলিগুড়ির শান্তিনগরে নিজের বাড়ির দোতলায় ছিলেন সম্রাট দাস (২৪)। ভূমিকম্প হচ্ছে, বুঝতে পেরে ছুটে নীচে নামতে শুরু করেন তিনি। সেই সময়েই বিপত্তি। কোনও ভাবে পা পিছলে গড়িয়ে পড়ে যান সিঁড়ি দিয়ে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বাড়ির লোক সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

শিলিগুড়িতে ভূমিকম্পের আতঙ্কে চোট পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। গত বছর এপ্রিলে মৃদু কম্পনে আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিন জন। পা ভেঙেছিল এক জনের। কিন্তু এ দিনের মতো মর্মান্তিক পরিণতি হয়নি কারওই।

এ দিনের ভূমিকম্পটির উৎসস্থল ছিল অসমের কোকরাঝাড়। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৬। এই এলাকাটি উত্তরবঙ্গের লাগোয়া হওয়ায় এখানে বিস্তীর্ণ এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়। এর আগে ২০১১ সালে এমনই এক সেপ্টেম্বরের দিনে কেঁপে উঠেছিল সিকিম। তার অভিঘাতে নড়ে গিয়েছিল শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ। সেই স্মৃতিই যেন ফিরে এল এ দিন।

মুর্শিদাবাদের একটি বেসরকারি বিএড কলেজে পড়তেন সম্রাট। বাবা বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। দাদা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। পাড়ার লোকজন বলছে, ২৪ ঘণ্টা আগেও চনমনে ছেলেটি পুজোর দিনগুলিতে কী করবে, তাই ঠিক করছিলেন। কী ভাবে যে এই দুর্ঘটনা ঘটে গেল, তা এখনও কেউ বুঝতে পারছেন না।

হাউ হাউ করে কেঁদে চলেছেন মা ঊষা দেবী। তার মধ্যেই বললেন, ‘‘কানে এখনও বাজছে গুলুর (সম্রাটের ডাক নাম) শেষ কথাগুলি— ‘মা, ভূমিকম্প!’ তার পর ভাড়াটের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি সিঁড়ির নীচে হাঁটু গেড়ে বসা অবস্থাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে ছেলে!’’ সম্রাটের ছায়াসঙ্গী ছিল ল্যাব্রাডর ‘হ্যাপি’। পড়শিদের কয়েক জন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের দুলুনি শুরু হতেই হ্যাপি চিৎকার করছিল। তখনই সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন সম্রাট। এই সময়ে পা হড়কে গড়িয়ে পড়ে যান। বাড়ির লোকজন গিয়ে দেখেন, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। মা ছেলের মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, মুহূর্তের মধ্যে অচৈতন্য হয়ে পড়েন সম্রাট। সম্রাটের বাবা অমিত বলেন, ‘‘চিকিৎসা করানোর সময়টাও পেলাম না!’’ ময়না-তদন্তের পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে সন্ধ্যায় সম্রাটের দেহ আনা হয় বাড়িতে। রাতেই শেষকৃত্য হয়।

এই ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনা শুরু হয়েছে, শিলিগুড়ির মতো ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় মানুষের আরও সচেতন হয়ে হাঁটাচলা করা উচিত। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক রঞ্জন রায় থেকে ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু, সকলেই জানিয়েছেন, অযথা ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করা একেবারেই ঠিক নয়। ভূমিকম্প হলে লিফ্‌ট ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে সিঁড়ি দিয়ে
নামতে গেলে মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপের দিকে নজর রাখা উচিত। না-হলে হাত-পা ভাঙা থেকে বেকায়দায় মাথায় আঘাত লেগে মৃত্যু— যে কোনও দুর্ঘটনাই
ঘটতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

earthquake siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE