Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Accident

ট্রেনের মুখে প্রৌঢ়াকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে যাদবপুর স্টেশন সংলগ্ন পালবাজার ক্রসিংয়ের কাছে।

সহদেব ঘোষ

সহদেব ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ০৫:২৭
Share: Save:

করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বন্ধুদের সঙ্গে যাদবপুরে ‘মাস্ক’ কিনতে গিয়েছিলেন কসবার তরুণ সহদেব ঘোষ (১৯)। ফেরার পথে ‘অসতর্ক ভাবে’ রেললাইন ধরে হেঁটে যাওয়া এক প্রৌঢ়াকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন তিনি।

৫৪-৫৫ বছর বয়সি ওই প্রৌঢ়াকেও বাঁচানো যায়নি। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে যাদবপুর স্টেশন সংলগ্ন পালবাজার ক্রসিংয়ের কাছে। সহদেব এবং ওই মহিলা, দু’জনকেই এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের ‘মৃত’ ঘোষণা করেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। গভীর রাত পর্যন্ত মৃত মহিলার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়ার দিক থেকে আসছিল ডাউন ক্যানিং লোকাল। তখনই যাদবপুর স্টেশনের কাছে রেললাইন পেরিয়ে পালবাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওই প্রৌঢ়া। ট্রেন ঢোকার মুখে তাঁকে লাইন পেরোতে দেখে অন্য যাত্রীরা চিৎকার করে হুঁশিয়ার করার চেষ্টা করেন। কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মহিলা তা খেয়াল করেননি। তখন সহদেব মরিয়া হয়ে মহিলাকে বাঁচাতে ছুটে যান।

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার রেললাইনে পালবাজার ক্রসিংয়ের কাছে রেল-কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর আগে পথচারীদের পারাপারের জন্য ভূগর্ভে একটি সাবওয়ে গড়ে দিয়েছেন। আগে সেখানে একটি লেভেল ক্রসিং ছিল। নতুন সাবওয়েটি কিন্তু জঞ্জালে ঠাসা। পথচারীদের হাঁটাচলার উপযুক্ত নয়। এখন সেখানে মাদকাসক্তদের আড্ডা বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের রেললাইন ধরে চলাচল করাই দস্তুর। এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে পারাপারের সময়েই।

কসবার বাসিন্দা সহদেব বাড়ির ছোট ছেলে। তাঁর বাবা-মা ছাড়াও এক দাদা ও এক দিদি আছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চাকরির খুঁজছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎমিস্ত্রি হিসেবে হাত পাকাচ্ছিলেন সহদেব। ওই তরুণের বাবা দিবাকর ঘোষ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘ছেলেটা বিকেলে ‘বাবা, যাই মাস্ক কিনে আনি’ বলে বন্ধুদের সঙ্গে যাদবপুর গিয়েছিল। তার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই পুলিশ ফোন করে দুর্ঘটনার খবর জানায়।’’

প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রের দাবি, মহিলা আপনমনে হেঁটে যাওয়ার সময় সহদেব এবং তাঁর বন্ধুরা রেললাইনের কাছাকাছি ছিলেন। লোকজন চেঁচালেও মহিলা তা শুনতে পাচ্ছেন না দেখেই ছুটে যান সহদেব। মহিলাকে হেঁচকা টানে রেললাইন থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু টাল সামলাতে পারেননি। দু’জনে মিলে রেললাইন থেকে সরে যাওয়ার আগেই ট্রেনটি চলে আসে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই ট্রেনের ‘হর্ন’ বাজেনি। বাজলে দুর্ঘটনা এড়াতে যেত। পূর্ব রেলের মুখপাত্র নিখিল চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। রেলের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে চালকেরা দফায় দফায় হর্ন বাজান। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Jadavpur Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE