Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Midnapore

বৃদ্ধা পিসিকে ওষুধ দিতে এসে একঘরে 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ষট্টির অলকা নন্দী ক্যানসারে আক্রান্ত।

চলছে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র

চলছে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানিকপাড়া শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২০ ০৪:৪৫
Share: Save:

ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা ক্যানসার আক্রান্ত নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা পিসির কাছে ওষুধ পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন হাওড়ার দাশনগরের এক তরুণী। তারপরে তাঁকে ও তাঁর পিসিকে একঘরে করার অভিযোগ উঠল পড়শিদের একাংশের বিরুদ্ধে। ওই তরুণীকে এলাকা ছাড়া করার দাবিতে সোমবার পথ অবরোধও করলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ার রামকৃষ্ণবাজার এলাকার ওই ঘটনায় শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ষট্টির অলকা নন্দী ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি মানিকপাড়ায় নিজের বাড়িতে একাই থাকেন। সম্প্রতি লকডাউনে তাঁর ওষুধ শেষ হয়ে যায়। সে কথা জানান তাঁর ভাইঝিকে। তারপরে কলকাতা থেকে ওষুধ কিনে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে শনিবার মানিকপাড়ায় আসেন তাঁর ভাইঝি পুনম নন্দী। তারপরেই শুরু হয় গোলমাল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়ে দেন, রেড জ়োন হাওড়া থেকে এসে ঝাড়গ্রামে থাকা যাবে না।

অলকা বলেন, ‘‘ভাইঝি আমার সঙ্গে ১৪ দিন বাড়িতেই থাকবে সেটা জানানোর পরেও পড়শিরা আপত্তি করেন।’’ তিনি জানান, শনিবার এক সিভিক ভলান্টিয়ার বাজার-জল পৌঁছে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে কেউ সহযোগিতা করছেন না। রাস্তার ধারে সরকারি ট্যাপকল থেকে জল নিতেও দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পুনমের ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে গেলে আমি করোনা পরীক্ষা করতে রাজি আছি। কিন্তু যেভাবে মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে তাতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’’

এ দিন অবরোধ চলাকালীন মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তাদের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। অবরোধে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মাহাতোকে। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁকে ডেকেছিলেন। ওই কর্মসূচিতে দলের কেউই ছিলেন না।’’ ওই বৃদ্ধার বাড়িতে জল বন্ধ করা হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ঝাড়গ্রামের বিডিও অভীজ্ঞা চক্রবর্তীকে ফোন করে ওই বৃদ্ধা ও তাঁর ভাইঝির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কথা বলার মাঝে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে বার বার ফোন করা হলেও ফোন কেটে দেন তিনি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমতি মিললে ওই তরুণীকে সরকারি নিভৃতবাসে রাখা হবে। বৃদ্ধার যাতে সমস্যা না হয় সেটাও দেখা হচ্ছে।’’

বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কের অভিযোগ, ‘‘করোনা আক্রান্ত হোন বা না হোন, সামান্যতম সন্দেহের বশে ঝাড়গ্রাম জেলায় বহু মানুষের উপর অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। ওই বৃদ্ধা ও তাঁর ভাইঝির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’’

মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান মহাশিস মাহাতোর অবশ্য দাবি, ‘‘কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা পথ অবরোধ করেছিলেন। তাতে বিরোধীরা রাজনৈতিক রং দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Midnapore Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE