Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ফোন কানে তরুণীদের বাঁচিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় জখম যুবক 

কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন তাঁরা। কোনও দিকে তাকিয়ে দেখেননি। এ দিকে ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছে আপ ধনধান্য এক্সপ্রেস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন তাঁরা। কোনও দিকে তাকিয়ে দেখেননি। এ দিকে ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছে আপ ধনধান্য এক্সপ্রেস।

দুই তরুণীকে এ ভাবে রেল লাইন পার হতে দেখে তাঁদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক যুবক। তাঁর চেষ্টায় ওই দুই তরুণী বেঁচে গেলেও লাইন থেকে সরতে পারেননি যুবকটি। ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন তিনি। যে দুই তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে যুবকটি জখম হলেন, তাঁরা ততক্ষণে বেপাত্তা। এই ঘটনার পরে জনতার সব রাগ গিয়ে পড়ে রেলের উপর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর রেলস্টেশনের ঘটনা।

জখম যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে রেল রুখে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। জনতার রোষ দেখে রেলের গেটম্যান এবং স্টেশন মাস্টার পালিয়ে যান। যদিও রেল সে কথা স্বীকার করেনি। মিনিট পনেরো পড়ে থাকার পরে রেলপুলিশ এসে জখম যুবককে তুলে স্থানীয় ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জ্ঞান না থাকায়, পুলিশ ও চিকিৎসকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। চিকিৎসকেরা জানান, যুবকের মাথায় ও শরীরে একাধিক ক্ষত রয়েছে। রাত পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।

রেলপুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিন নম্বর লাইনে আপ কলকাতা-লালগোলা ধনধান্য এক্সপ্রেস শ্যামনগর স্টেশনে ঢুকছিল। ট্রেনটি ওই স্টেশনে থামে না। ওই সময় ২৩ নম্বর রেলগেটের কাছে লাইন পার হচ্ছিলেন দুই তরুণী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাঁদের কানে হেডফোন লাগানো ছিল। তিন নম্বর লাইনের দিকে তাঁদের আসতে দেখে অনেকেই চিৎকার করে তাঁদের সতর্ক করেন। কিন্তু শুনতে পাননি তাঁরা। এর মধ্যেই তাঁদের বাঁচাতে ছুটে যান রেললাইনের ধারে দাঁড়ানো এক যুবক। তিনি সম্ভবত ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে এসেছিলেন।

আরও পড়ুন: ট্রান্সপোর্টারদের কাজ বন্ধ, অচল হলদিয়া বন্দর, দাঁড়িয়ে অন্তত ৩০ জাহাজ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই তরুণীকে কোনও রকমে রেললাইন থেকে ঠেলে সরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু নিজে আর সরতে পারেননি। ট্রেনটির ধাক্কায় তিনি লাইনের ধারে ছিটকে পড়েন। ঘটনার পরে ওই দুই তরুণীকে আর দেখতে পাননি কেউ।

দিন দুই আগে রেলগেট খোলা অবস্থায় ট্রেন ঢুকে পড়েছিল শ্যামনগর স্টেশনে। ট্রেনের ধাক্কায় তুবড়ে যায় একটি অটো। এর জেরে রেল অবরোধ করেছিলেন স্থানীয়েরা। আগে থেকেই তাই রাগ ছিল জনতার। এ দিনের ঘটনার পরে অনেকেই রেল লাইনে বসে পড়েন। জখম যুবককে সঙ্গে সঙ্গেই তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়নি বলেও অভিযোগ। জখম অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ পড়ে ছিলেন তিনি। পরে কয়েকজন যুবক একটি অ্যাম্বুল্যান্স ডাকেন। ততক্ষণে রেলপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এর মধ্যে ২৩ নম্বর রেলগেটটি ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। গেটম্যান এবং স্টেশন মাস্টার পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।

শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, “জনতা জখম যুবককে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য গেট খুলে দিতে বললে, ট্রেন আসছে এই যুক্তিতে গেটম্যান গেট খোলেননি। তার পরেই গেটটি ভেঙে ফেলা হয়। স্টেশন মাস্টার কেন পালিয়ে গিয়েছিলেন জানা যায়নি।” ঘণ্টাখানেক চলার পরে পুলিশ অবরোধ তুলে দেয়। রেল জানিয়েছে, ৫টা১৩ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Mobile Phone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE