শ্রীনগরে সেনা টহল। ছবি: পিটিআই।
ইদের মুখে বাড়ি ফেরেন ঘরের ছেলেরা। আগের রাত থেকেই গ্রামের ঘরে ঘরে রান্নার সুবাস মেলে। ঘরদোর পরিষ্কার হয়। আনন্দে ঘুম আসত না গ্রামে। এখন চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক হচ্ছে না।
উত্তর দিনাজপুরের ঘরধাপ্পায় অনেক বাড়িতে উনুনই ধরেনি। গ্রামের ছয় যুবক কাশ্মীরে আটকে পড়েছেন। আপেল বাগানে কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আচমকা পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। কোথায় কী হয়, তাই বেরোতে সাহস পাননি আব্দুল কাশিম, নাদিম আজম, নিজাবুল হক, মিনাজুল হক, জাফর আলি, জামিল আখতারের মতো ছয় যুবক। তাঁরা থাকেন কুলগামে। সেখান থেকে শ্রীনগর গাড়িতে প্রায় দেড় ঘণ্টা। জম্মু সাড়ে ছ’ঘণ্টা। সেই ঝুঁকি নিতে পারেননি কাশিমরা। এই গ্রামেরই জাকির, ফিরোজ, মেহবুব, শামিমদের ফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাঁদের বাগানের মালিক। ট্রেন থেকেই ফোনে শামিম বললেন, ‘‘কাশিমরা অনেকটা দূরের একটা বাগানে থাকে। ওখান থেকে বেরোনো মুশকিল। ওদের হাতে টাকাও নেই। ভয়ও রয়েছে।’’
কাশিমের স্ত্রী নাদিরা জানালেন, সাত দিন ধরে স্বামীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়নি। যেটুকু জেনেছেন, খুব ভয়ে ভয়ে তাঁদের দিন কাটছে কাশ্মীরে। বাগানের আস্তানায় তবু নিরাপদ। একবার বেরোলে কোথায় কী অবস্থায় পড়বেন, সেই ভয়ে বাড়ি আসতে চাননি তাঁরা। কিন্তু সেখানেই বা কেমন দিন কাটছে, নাদিরার কাছে পরিষ্কার নয়। সংবাদপত্রে কাশ্মীরের একটি হেল্পলাইন নম্বর পেয়ে ছয় যুবকের বাড়ির লোকেরাই বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। নাদিরা বলেন, ‘‘আঙুল ব্যথা হয়ে গিয়েছে। ফোন ধরেনি কেউ।’’ জাকিরের স্ত্রী আরমানি খাতুন স্বামীর ফোন পেয়েছেন শনিবার। কিন্তু কাশিমদের কথা ভেবে সেই আনন্দ প্রকাশ করছেন না। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের সাহাপুরে যেমন আলিগুনবিবিও বারামুলায় ছেলের খোঁজ পাননি। এই গ্রামের তিন জন কাশ্মীরে আটকে।
গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি জানান, কাশ্মীরে কারা আটকে রয়েছেন, তার তালিকা হচ্ছে। রাজ্য তাঁদের জন্য উদ্যোগী হবে। স্থানীয় হাইমাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলাউদ্দিন খান বললেন, ‘‘গরিব এলাকা, অনেকেই পড়াশোনা শেষ না করে দিনমজুরি করতে ভিন্ রাজ্যে চলে যান। তাঁরা বা তাঁদের স্ত্রীরা প্রোষিতভর্তৃকা কথাটার মানে শেখেন না, কিন্তু সেই দুঃখটা আজীবন ভোগ করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy