Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

অনশনে অসুস্থতার মধ্যেই আজ জটমুক্তির বৈঠক

কারও কারও ব্লাড সুগার কমে ৪৩ বা ৪৭-এ নেমে গিয়েছে। অথচ তা থাকার কথা ৭০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। অনেক পড়ুয়ার রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে কম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত ওই সব ছাত্রছাত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েক জনকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শও দেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কয়েক জন পড়ুয়ার বাড়িতে চিঠি লিখে স্বাস্থ্যের অবনতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ।

অনশনে। বৃহস্পতিবার শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।

অনশনে। বৃহস্পতিবার শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

কারও কারও ব্লাড সুগার কমে ৪৩ বা ৪৭-এ নেমে গিয়েছে। অথচ তা থাকার কথা ৭০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। অনেক পড়ুয়ার রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে কম।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত ওই সব ছাত্রছাত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েক জনকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শও দেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কয়েক জন পড়ুয়ার বাড়িতে চিঠি লিখে স্বাস্থ্যের অবনতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ।

সোমবার রাতে আমরণ অনশনে বসা ১২ জন পড়ুয়ার স্বাস্থ্যপরীক্ষা হচ্ছে রোজই। চিকিৎসকেরা জানান, ব্লাড সুগার এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। ছাত্রছাত্রীদের অন্তত গ্লুকোজ-জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কয়েক জন তা মানলেও অনেকেই কথা শুনছেন না। কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শও কানে তুলছেন না অনশনে বসা আন্দোলনকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, নিয়ম মেনেই কর্তৃপক্ষ অনশনকারীদের ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় আমরণ অনশনের কথা জানিয়েছেন। অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের কথা জানিয়ে এ দিন তাঁদের বাড়িতে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে যে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হতে পারে, তা-ও জানানো হয়েছে চিঠিতে। সেই চিঠি নিয়ে গিয়েছেন স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীরা। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশকর্মীরা হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তবে অনেকে সেই চিঠি পাননি বলে অনশনকারীরা জানান।

অনড় অবস্থান থেকে কিছুটা সরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অবশ্য রাজি হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিকে সামনে রেখেই আজ, শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টেয় বিকাশ ভবনে পার্থবাবুর সঙ্গে বৈঠক করতে যাবেন ১২ জন অনশনকারী। তাঁদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করার চেষ্টা চলছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর। তবে ছাত্রছাত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্যের ইস্তফার দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আলোচনায় রাজি না-হলে বৈঠকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হবে। বৈঠকের আগে, বেলা ২টোয় আন্দোলনকারীরা সল্টলেকের করুণাময়ী মোড় থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিলও করবেন।

শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, যাদবপুরে মাস চারেক ধরে চলা জটিলতা কাটাতে আজ উপাচার্য, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গেও আলোচনায় বসার কথা শিক্ষামন্ত্রীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার কেন হস্তক্ষেপ করবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। পার্থবাবু অবশ্য বুধবারেই জানিয়ে দেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন এমন গোলমাল চলতে দেওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে আসরে নামতে হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, কোনও পূর্বশর্ত না-রেখে, খোলা মনে সকলের আলোচনায় বসা উচিত। বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছু বলতে চাননি পার্থবাবু।

তবে মুখ খুলেছেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ দিন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পরে যাদবপুরের পড়ুয়াদের অনশন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেন, “ওদের অনশন তুলতে বাধা দিচ্ছে কে? নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে ওদের গর্ব বোধ করা উচিত। অনশনেও ইতি টানা উচিত।”

রাজ্যপালের এই মন্তব্যে আবার আপত্তি তুলেছেন প্রবীণ শিক্ষকদের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতিতে যতটা আন্তরিকতা ও সহানুভূতি প্রয়োজন, আচার্যের বক্তব্যে তার খামতি আছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা আচার্যসুলভ কথাই নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হল, আচার্য ঠিক পথে সমস্যাটার সমাধানের চেষ্টা না-করে এই ধরনের কথা বলছেন।”

শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু যে-ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, বুধবার তার সমালোচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়। এ দিন তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটানো নিয়ে আচার্য-রাজ্যপালের ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

আচার্য-রাজ্যপালের মন্তব্যে হতাশ আন্দোলনকারীরাও। অনশনকারী ছাত্রী সুধন্যা পালের প্রশ্ন, ২৮ অগস্ট ক্যাম্পাসের হস্টেলে যখন এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এবং তা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট অমীমাংসিতই থেকে যায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব কোথায় ছিল? একের পর এক কাণ্ড ঘটানোর সময় খোদ উপাচার্য কি বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বের কথা মাথায় রাখেন? সেই উপাচার্যকেই স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের কথা আচার্যের খেয়াল ছিল কি? আন্দোলনকারী ছাত্র চিরঞ্জিত ঘোষ বলেন, “কিছু ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে আমাদের অহিংস আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব কী ভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, বুঝছি না। গৌরব তো নষ্ট হচ্ছে উপাচার্যের জন্যই!” উপাচার্য অবশ্য মঙ্গলবারেই বলেছিলেন, তাঁর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, এটা মানতে রাজি নন তিনি।

আচার্যের কথায় অবশ্য তেমন বিস্মিত নন যাদবপুরের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। তাঁর মন্তব্য, আচার্য বিচক্ষণ মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই বুঝছেন যে, বিশেষ উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলন হচ্ছে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “এটাও ঠিক যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন, গবেষণার উপরে যে-আঘাত আসছে, সেটা ছাত্রছাত্রীরা আনছে না। আনছেন বর্তমান কর্তৃপক্ষ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে যাদবপুরের শিক্ষার সামগ্রিক উৎকর্ষের কথা ভুললে চলবে না।” শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগকে বুধবার স্বাগতই জানিয়েছিলেন সুকান্তবাবু।

যাঁর পদত্যাগের দাবিতে এত কাণ্ড, সেই অভিজিৎবাবু কী বলছেন?

উপাচার্য এ দিন যাদবপুর-মুখো হননি। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসে। তিনি জানান, অনশন আন্দোলন নিয়ে যা বলার রেজিস্ট্রারই বলবেন। উপাচার্যের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কী বলবেন, সেই বিষয়েও মুখ খুলতে চাননি উপাচার্য। বলেন, “বৈঠকে না-গিয়ে কী করে বলব, সেখানে কী হবে?”

উপাচার্য না-এলেও তাঁর ইস্তফার দাবিতে যাদবপুর ক্যাম্পাস এ দিন সরগরম ছিল। বেলা আড়াইটে নাগাদ ক্যাম্পাস থেকে পঞ্চাননতলা পর্যন্ত মিছিল করেন ছাত্রছাত্রীরা। আড়ে-বহরে যথেষ্ট বড় মিছিলের প্রধান দাবি, অভিজিৎবাবুকে পদ ছাড়তেই হবে। এক আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা এই চার মাসে অনেক পথেই হাঁটলাম। এ বার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সরাসরি নিজেদের দাবি জানাব। উনি মেনে নিলে ভাল। নইলে আমাদের আন্দোলন চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jadavpur university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE